দীর্ঘদিন ধরে মরা ছাগলের মাংস যাচ্ছিল জেলখানা-হাসপাতালে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
দীর্ঘদিন ধরেই মরা ছাগলের মাংস যাচ্ছে রাজশাহীর জেলখানায়! বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যাচ্ছিল এই মাংস। এই মাংস নগরীর বিভিন্ন ধরনের হোটেল-রেস্তোরাঁ, এমনকি খোলা বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছিল।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বালিয়া এলাকায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মরা ছাগলের মাংসের চালান আটকে দেয়। ধরা পড়ে যান এই কাণ্ডে জড়িত চারজন। সেখান থেকেই বেরিয়ে পড়ে থলের বিড়াল।
আটকরা হলেন রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়ার এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান আপেল, ফাইসাল, তাদের সহযোগী কায়েস ও ফয়সাল হোসেন। তাদের কাছে মৃত ছাগলের ১৫০ কেজি মাংস, চারটি মৃত জবাই করা ছাগল ও ২৭টি রুগণ ছাগল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে এই চারজন স্বীকার করেছেন, অল্প মূল্যে মরা ছাগলের মাংস, মরা জবাই করা ছাগল এবং অসুস্থ ছাগল কিনে নগরীতে আনছিলেন তারা। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই কাণ্ডে যুক্ত।
তারা এই মাংস সরবরাহ করে আসছিলেন নগরীর বিভিন্ন খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও বিরিয়ানি হাউজে। বিক্রি হচ্ছিল খোলা বাজারেও। জেলখানা, এমনকি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যাচ্ছিল এই মাংস।
পরে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর এই কাণ্ডের হোতা মশিউর রহমান আপেল ও মো. ফাইসালকে ৮০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জবাই করা মৃত ছাগল এবং মৃত ছাগলের মাংস মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করা হয়।
রাজশাহী নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নগরীর খাবার হোটেলে সরবরাহের উদ্দেশ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে মৃত ছাগলের মাংস, মৃত জবাই করা ছাগল ও অসুস্থ ছাগল আসছিল।
গোপন সংবাদ পেয়ে উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে নগরীর বালিয়া মোড় এলাকায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ।
এ সময় ছাগলবাহী পিকআপ ভ্যান আটক করে পুলিশ। তল্লাশি চালিয়ে ওই পিকআপ ভ্যান থেকে বস্তাভর্তি ১৫০ কেজি মরা ছাগলের মাংস, ৪টি জবাই করা মরা ছাগল ও ২৭টি অসুস্থ ছাগল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় আটক করা হয় ওই চারজনকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা মাংস সরবরাহের বৈধ কাগজ-পত্র দেখাতে পারেননি। পশুচিকিৎসকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা করে এসব ছাগল জবাইয়েরও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি তারা।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, বস্তাভর্তি মাংস ও জবাইকৃত ছাগলগুলো পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নেয় পুলিশ। সেখানে জেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানান, মাংসগুলো মরা ছাগলের।
এছাড়া যে চারটি ছাগল জবাই করা হয়েছে, জবাইয়ের আগেই সেগুলো মারা গেছে। জীবিত ছাগলগুলো অসুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলেও জানান সেনেটারি ইন্সপেক্টর। পরে আটকদের ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে, জেলখানায় মৃত ছাগলের মাংস সরবরাহের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা। তিনি বলেন, মাসে তারা একবার ছাগির মাংস নেন। সেই ছাগল জবাই হয় জেলগেটেই। এরপর দেখে শুনে তারা মাংস নেন। তাছাড়া এই কাণ্ডে যারা আটক হয়েছেন, ওই নামে তাদের কোনো সরবরাহকারীও নেই।