প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

মোগল স্থাপত্য জিঞ্জিরা প্রাসাদ প্রভাবশালীদের দখলে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৪০, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩ পৌষ ১৪২৮
 জিঞ্জিরা প্রাসাদ
জিঞ্জিরা প্রাসাদ

এইচ এম আমীন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা

কেরানীগঞ্জের ঐতিহাসিক মোগল স্হাপত্য জিঞ্জিরা প্রাসাদ দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে| পর্যায়ক্রমে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকার পুরান ঢাকার নবাববাড়ি খ্যাত আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণ করলেও জিঞ্জিরা প্রাসাদ এখনো অবহেলিত|

 

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১১ প্রভাবশালী প্রাসাদের প্রাচীন নগর ও দেওয়াল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে| দখলদারদের কবল থেকে প্রাসাদটি উদ্ধার করে সংরক্ষণের জন্য বিগত তিন যুগ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হলেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি| কেরানীগঞ্জবাসীসহ সকল মহলের এখন প্রাণের দাবি অবিলম্বে প্রাসাদটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত করে দেওয়া|

জানা গেছে, প্রথম দিকে মোট তিনটি ভবনের সমন্বয়ে সরকারি কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে তৎকালীন প্রশাসন| কালের আবর্তে মোগল, ইংরেজ ও পাকিস্তানি শাসনের অবসান| অতঃপর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অযত্ন-অবহেলায় থাকা বহু প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সরকারের নজরে এসেছে| তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর অদূরে অবস্থিত সোনারগাঁওয়ের পানাম নগর ও ঈসা খাঁর প্রশাসনিক রাজধানী এখন বিশেষভাবে সংরক্ষিত| একইভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু স্থাপনা| চিরাচরিতভাবে আলোর নিচে রয়ে গেছে অন্ধকার| রাজধানীর একেবারে উপকণ্ঠে অবস্থিত জিঞ্জিরা প্রাসাদ| অথচ তা সঠিকভাবে দেখভালের অভাবে স্বার্থান্বেষী মহল বিনা বাধায় দখল করে নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ করেছেন| কোনো সময়ই তারা স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহির আওতায় আসেনি| কোন অধিকারে তারা এমনটি করছে তাও জানা যায়নি| একাধিক বার তাদের বক্তব্য জানতে চেয়ে সদুত্তর মেলেনি| প্রশ্ন হচ্ছে-কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কি এভাবেই বেহাত হয়ে যাবে ?

এ বিষয় নিয়ে ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লার পুরাতন কাঠামো সঠিক রেখে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে| জিঞ্জিরা প্রাসাদ দখল মুক্ত করতে তিনি (প্রতিমন্ত্রী) উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন| উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ও নির্বাহী কর্মকর্তা জিঞ্জিরা প্রাসাদ দখল মুক্ত করে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে জরিপ করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন| শাহীন আহমেদ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলে দ্রুত প্রাসাদটি উদ্ধার ও সংরক্ষণ সম্ভব হবে| এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন|

স্মরণ করা যেতে পারে , ১৬৮৯ সালে বাংলার সুবাদার ইব্রাহিম তার রাজ দরবারের কেরানি ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেন দৃষ্টিনন্দন তিনটি ভবন| সে কারণেই এলাকাটির নামকরণ হয় কেরানীগঞ্জ| ১৭৪০ সালে নবাব সরফরাজ খাঁর পতন হলে ক্ষমতা দখল করেন হোসেন কুলি খাঁ| ১৭৫৪ সালে ঘাতকরা কুলি খাঁকে হত্যার পর এ প্রাসাদে কুলি খাঁর পরিবারে সদস্যরা বসবাস করতে থাকে| মীর জাফর আলীর চক্রান্তে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদদৌলার পতনের পর তার মা আমেনা, খালা ঘষেটি বেগম, স্ত্রী লুত্ফুন্নেছা ও তার শিশুকন্যাকে জিঞ্জিরা প্রাসাদে বন্দি করে রাখা হয়|

Share This Article