পাহাড়কে অশান্ত করতে তৎপর হয়ে উঠছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৮, রবিবার, ২৯ মে, ২০২২, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

আকাশ কুসুম চিন্তা নিয়ে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র একাধিক সংগঠনের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পিজেএসএস (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি) ও ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) পর কথিত নতুন আরেক আপদের আবির্ভাব ঘটেছে।

 এই আপদের নাম কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট)। ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২৫ বছর আগে। কিন্তু শান্তিচুক্তি সম্পাদনকারী জেএসএস এবং শান্তিচুক্তির বিরোধী ইউপিডিএফ অব্যাহতভাবে পাহাড়কে অশান্ত করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক এই দুটি দলের নীতিনির্ধারকরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন করার দুঃস্বপ্নও দেখে আসছে। অপরদিকে, কেএনএফ পাহাড়ের ৯ উপজেলা নিয়ে পৃথক অঞ্চল বা রাজ্য গড়ার স্বপ্নে যেন বিভোর হয়ে আছে। এসব সংগঠনের অলীক স্বপ্নের কারণে পাহাড় নিয়ে উটকো ঝামেলার মনোভাব রয়েছে প্রশাসনের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে। যদিও কথিত এসব স্বপ্ন নিয়ে প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য প্রদান করে না। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদের স্বরূপে মূলত এরা কারা?

এমনিতে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ দু’ভাগ হয়ে মূল চার গ্রুপে বিভক্ত। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রশ্নটি যখন এসে যায়, তখন তারা এক সুরে কথা বলে। আর কেএনএফের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বান্দরবানের রুমা রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও থানচি উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য করতে চায়। এসব সংগঠনের নেপথ্যে প্রতিবেশী দেশসমূহের ইন্ধন রয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যায়। এদের জন্য অর্থের পাশাপাশি অস্ত্রের জোগানও এসে থাকে। দিন দিন এ প্রক্রিয়াটি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবুজের পাহাড় নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে বলে চাউর হয়েছে।

জেএসএস ও ইউপিডিএফ মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর আধিক্যে গড়া। আর কেএনএফ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৬ নৃ-গোষ্ঠী অর্থাৎ বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং সম্প্রদায়ের অপেক্ষাকৃত সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা সদস্যদের নিয়ে গড়া বলে নিজেদের প্রচার রয়েছে। পাহাড়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ী জনপদগুলোর জেএসএস এবং ইউপিডিএফের নজিরবিহীন চাঁদাবাজি এবং অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ে বিপর্যস্ত। বর্তমানে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের সঙ্গে জড়িতদের চাঁদাবাজি ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করছে বলে প্রতীয়মান। কেএনএফের সদস্য সংখ্যাও বাড়ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেএনএফের প্রচার রয়েছে। এদের নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। কেএনএফের সভাপতি নাথান বম যিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েট। তিনি নাকি চিত্রশিল্পী এবং এর পাশাপাশি লেখকও। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান থেকে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। এ সংগঠনটির অতীত নিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৭ সালে একটি সশস্ত্র গ্রুপ গঠিত হয়। শুরুতে যার নাম ছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি) যা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএফ হয়েছে। শুরুতে এদের ভারতের মণিপুর এবং মিয়ানমারের চীন রাজ্যের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ওই সব রাজ্যে এদের ক্যাডারদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। ট্রেনিং গ্রহণকারীরাই সীমান্তের এপারে এসে উক্ত ৯ উপজেলা নিয়ে পৃথক অঞ্চল গড়ার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব বিষয় নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে শুনে আসছেন বলে স্বীকার করলেও এদের অস্তিত্ব আদৌ কতটুকু, তা নিয়ে সন্দিহান। বান্দরবানের গহীনে রুমা উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলে কেএনএফের গোপন আস্তানা রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। কেএনএফ তাদের কল্পিত পৃথক রাজ্যের জন্য আলাদা পতাকা, মুদ্রা এবং সংগঠন লোগো চূড়ান্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। এ সংগঠনের কয়েক ক্যাডার ইতোমধ্যে কয়েক দফায় অবৈধ অস্ত্র ও সরঞ্জামসহ ওপারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত ২০০৮ সালে কেএনডিও (কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সংগঠনটির জন্ম। পরে হয়েছে কেএনভি (কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স)। আরও পরে হয়েছে কেএনএফ। এর সশস্ত্র উইংয়ের নাম কেএনএ (কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি)।

সূত্রগুলো জানায়, জেএসএস ও ইউপিডিএফ দশকের পর দশকজুড়ে স্বায়ত্তশাসন আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে আসছে। মূলত স্বায়ত্তশাসনের ব্যানারে এরা পাহাড়কে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন করার দুঃস্বপ্ন দেখছে। আর কেএনএফ পুরো পাহাড় নয়, পাহাড়ের ৯ উপজেলাকে নিয়ে আলাদা রাজ্য গড়তে চাই। প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই তিন সংগঠনের পুরো কার্যক্রমই মূলত সন্ত্রাসী তৎপরতার অংশ, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনী। আর স্বায়ত্তশাসনের নামে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার অপতৎপরতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়। দিন যতই গড়াচ্ছে, এসব সংগঠনের অপতৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। জেএসএস যেমন আলাদা জুম্মল্যান্ড করার দুঃস্বপ্ন নিয়ে পতাকা, মুদ্রা এমনকি জাতীয় সঙ্গীতও প্রণয়ন করেছে। অনুরূপভাবে কেএনএফও তৈরি করেছে তাদের দুঃস্বপ্ন নিয়ে মানচিত্র, পতাকা, মুদ্রা ও লোগোর চিত্র।

পাহাড়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি হেলাফেলা করে দেখার কোন বিষয় নয়। দুর্গম অঞ্চলের সন্ত্রাসী তৎপরতা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। কিন্তু এ দেশের সীমানার অভ্যন্তরে থেকে আলাদা রাজ্য বা অঞ্চল গঠনের অলীক স্বপ্ন নিয়ে যারা প্রচার চালাচ্ছে এবং সহিংসতা সৃষ্টি করে চলেছে, তাদেরকে কঠোরহস্তে দমন করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ থাকতে পারে না।

কেএনএফ নিয়ে গত এপ্রিল মাসে দৈনিক জনকণ্ঠের বান্দরবান প্রতিনিধির বরাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলার ৯ উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এবার পাহাড়ে ৩ হাজার সদস্য নিয়ে শসস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। আগামী বর্ষা মৌসুমে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে বলে ঘোষণা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ¤্রাে ও খিয়াং এই ৬টি সম্প্রদায়কে অনগ্রসর ও শান্ত স্বভাবের সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করা হলেও এবার তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। ’৪৭-এ উপ-মহাদেশের বিভক্তি ও ৭১ পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র আন্দোলনের ফলে পার্বত্য জেলা ছেড়ে ভারতের মিজোরাম, লংতলাই, লুংলেই ও মামিট জেলায় দেশান্তরি হয় খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী এই সম্প্রদায়ের অনেকে। তাদের অনেকে এখন আর্থিক সহায়তা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই কুকি-চিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র আন্দোলনে নামছে।

আরও জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-খ- নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে (কেএনএফ) এবং এর সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) মনে করে, পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদি নিবাস, ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়, ফলে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়।

কেএনএফের অভিযোগ, বিভিন্ন মহল তাদের ভূমিতে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুমসহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে। কেএনএফের প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মং মার্মা বলেন, কোন সশস্ত্র সংগঠনই পার্বত্য জেলার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। পার্বত্য জেলায় জেএসএস (মূল), ইউপিডিএফ (মূল), জেএসএস (সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি নামে ৫টি সংগঠনের সংঘাত ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে অশান্ত পাহাড়, সেই সঙ্গে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আত্মপ্রকাশ পাহাড়ে সংঘাত আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কেএনএফের অপতৎপরতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে, এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের পত্র-পত্রিকায়ও খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


আন্দোলন নিয়ে ভারত সরকারকে ‘নোট’ দিয়েছে ঢাকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘রাতেই বাসা-বাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হতে পারে’

চার দফা না মানলে আট দফা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই

ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রবিরোধী

তালিকা হচ্ছে গা-ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের

আত্মগোপনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার আনা এখন সময়ের দাবি: আরেফিন সিদ্দিক

র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনতি ব্রাজিলের, শীর্ষেই থাকছে আর্জেন্টিনা

আন্দোলনকারীদের থেকে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের নিজগৃহে অবস্থানের অনুরোধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

‘কোটা সংস্কার নিয়ে প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস হতে পারে’

মহাসড়ক অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ