‘জীবন্ত’ মসজিদ

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:১৭, শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

পৃথিবীর প্রথম মসজিদ খানায়ে কাবাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর প্রথম নগর মক্কানগরী গড়ে উঠেছে। আজ থেকে এক হাজার বায়ান্ন বছর আগে ফাতেমি যুগে মিসরের কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত নবি দুহিতা

ফাতেমাতুজ্জাহরার নামে ‘আল মাসজিদু জামে আজহার’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তাকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়’ (প্রতিষ্ঠাকাল ৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ)। পৃথিবীর প্রাচীনতম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘জামে আজহার বিশ্ববিদ্যালয়’। আরেকটি ইরানের কোম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

এগুলো পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজ থেকেও প্রাচীন। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জামেয়া। জামে শব্দের অর্থ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নয়। জামে অর্থ হচ্ছে পড়সঢ়ষবী বা সম্মিলিত ব্যবস্থা।

যে মসজিদে জুমা হবে, পাঞ্জেগানা নামাজের সঙ্গে পাঠদান হবে, পাঠাগার থাকবে, চা-নাশতার ব্যবস্থা থাকবে, শিশু-কিশোর নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণির জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে, জনকল্যাণকর কর্মসূচি থাকবে, বহুমুখী কার্যক্রমের জন্য বহু স্থাপনা ও উদ্যোগ থাকবে তা হচ্ছে জামে মসজিদ বা ‘মসজিদ কমপ্লেক্স’।

এ ধরনের একটি মসজিদের নাম ‘জামে আজহার’। গুণগতভাবে এটিকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এটি একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত হলেও আজও কিন্তু ‘জামে আজহার’কে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে নামকরণ করা হয়নি।

মুসলিম ইতিহাসের স্বর্ণালি যুগের সাক্ষী হিসাবে এখনো টিকে আছে আজহার জামে মসজিদ। এসব মসজিদ থেকে এক সময় রাজনীতি, সমাজনীতিসহ শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রিত হতো। জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎস ওহির জ্ঞানের আলোকে এসব শিক্ষাকেন্দ্র জামে মসজিদে যুগ যুগ ধরে চলেছিল। যেমন দামেস্কের জামে মসজিদ। যেখানে ঈসা (আ.) আসমান থেকে নামবেন বলে শ্রুতি রয়েছে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু নবিজি (সা.)-এর সময়ে মসজিদে নববি থেকে পরিচালিত হতো। যে কোনো ব্যক্তিগত ও সামাজিক সমস্যায় লোকেরা মসজিদে হাজির হতো। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ক্রমবিকাশে আলাদা অফিস-আদালত স্থাপিত হলেও শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ মসজিদ থেকেই হতো। মাদ্রাসা-বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে শুরু হয়।

এখনো জামে আজহার তা জানিয়ে দিচ্ছে সেই মুসলিম ঐতিহ্য। বর্তমানে বেশিরভাগ মসজিদ প্রাসাদের মতো স্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত হলেও নামাজের পর এগুলো মৃত পড়ে থাকে। ইমাম মুয়াজ্জিনদের বেতন কম বলে নামাজের পরই তারা নিজের ধান্ধায় বেরিয়ে পড়েন-তাই মসজিদের কার্যক্রম আগের মতো নেই। আশার কথা সাম্প্রতিককালে ‘জামে মসজিদে’র ধারণা ইউরোপ আমেরিকায় ইসলামিক সেন্টার নামে কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে।

ইসলামিক সেন্টারে নামাজের জামাতের সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্টিন ব্যবস্থা, পাঠাগার ব্যবস্থা, অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা, রিলিফ কার্যক্রমসহ জনকল্যাণমূলক অনেক কর্মসূচি ইসলামিক সেন্টারে যুক্ত হয়েছে। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে মক্তব ব্যবস্থাও ঠিকমতো হচ্ছে না। জনকল্যাণমূলক কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আজানের নামাজের জন্য ‘হাইয়া আলাস সালাহ্-এসো নামাজের জন্য’ বলার পর।

সুবিধা কল্যাণ পাওয়ার জন্য ‘হাইয়া আলাল ফালাহ-এসো কল্যাণের জন্য’ ঘোষণা করা হয়। বাস্তবে মসজিদে নামাজের বাইরে কোনো সুবিধা ও কল্যাণকর ব্যবস্থা বর্তমানে নেই। কার্যত মসজিদগুলো মরে গেছে।

পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় ইসলামি শিক্ষার পুরোধা মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী সদরসাব হুজুর মৃত মসজিদগুলো জীবন্ত করার উদ্যোগ নিয়ে লালবাগ শাহী মসজিদে জামেয়া কুরআনিয়া স্থাপন করেন। তার চিন্তার ফসল জনগণের চেতনায় জাগৃতির জন্য ‘জীবন্ত মসজিদ’ নামে একটি পুস্তিকাও লিখে বিতরণ করেন।

সদরসাব হুজুরের যোগ্য উত্তরসূরি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর আশা করা যায় বায়তুল মোকাররমকে কেন্দ্র করে ঢাকার মৃতবৎ মসজিদগুলোকে জীবন্ত করে তুলবেন।

১৯৫৬ সালের ২৮ জুলাইয়ে সদর সাব হুজুরের নিজ হাতে লেখা একটি চিঠি আমাদের কাছে এখনো সংরক্ষিত আছে, যেখানে তিনি সোনারগাঁ পরগণার হাদি ও মুবাল্লিগ মাওলানা লালপুরী শাহকে মসজিদগুলোকে জীবন্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সদরসাব হুজুরের সহকর্মী ঢাকার কুতুব ও আধ্যাত্মিক নেতা হাফেজ্জী হুজুরও প্রতিটি মসজিদে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা স্থাপনে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। মসজিদকে জীবন্ত করার জন্য বাইরের লোকেরা উদ্যোগ নেবে না সমাজের লোকদেরই উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রাথমিকভাবে মসজিদে যেসব প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে

১. মসজিদে ফ্রি ফোরকানিয়া মক্তব-মাদ্রাসা বয়স্ক শিক্ষাকার্যক্রম চালু। ২. সামাজিককল্যাণ তহবিল গঠন করে মসজিদ এলাকায় সেনিটেশন কার্যক্রম কর্জে হাসানা বা সুদমুক্ত ঋণদান কার্যক্রম। ৩. শিশু ও মুসল্লিদের নিয়ে শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা। ৪. ক্যান্টিন ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিটি জামে মসজিদে থাকতে পারে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা।

Share This Article