বাংলাদেশ আমার অন্তরে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে : শ্রিংলা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:২৮, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও শেখ হাসিনা
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারতের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশ আমার কাছে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই বন্ধন অব্যাহত থাকবে।

 

তিনি বলেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক সুদৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন রয়েছে। ইউক্রেনে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। হিংসা এবং সংঘাত অবিলম্বে বন্ধ হয় তার ডাক দিয়েছি। 

পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দুই বছরের মেয়াদ শেষ ও কাজের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তার সাক্ষাৎকারটির বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা শেষ হলো। কেমন অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন এই দুই বছরে? কোনো বিষয়ে আক্ষেপ আছে কি?

উত্তর : গত দুই বছর যেন ঝড় বয়ে গেল। নাগরদোলার মতো ওঠা নামা চলছে তো চলছেই। এই সময়ে বিদেশ সচিব হিসেবে কাজ করতে পারাকে সৌভাগ্যই মনে করি। বহু কারণেই এই দুই বছর দেশের জন্য এবং বিদেশমন্ত্রকের জন্যও এক নির্ণায়ক সময়সীমা। হ্যাঁ, প্রতিপদে কাজের চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, তা কোনো কিছুর বদলেই হারাতে চাইব না। প্রায় পুরো সময়সীমা জুড়ে কভিড সংকট তো ছিলই। কিন্তু সেটাই সব নয়। আফগানিস্তান থেকে ইউক্রেন- কী ঘটেনি বলুন! ভোর ৩টেতেও ফোন ধরতে হয়েছে। সংকটের সমাধানে কাজ করতে হয়েছে।

প্রশ্ন : প্রথমে অতিমারি। তারপর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনের নানামুখী ভূমিকা। এরপর আফগানিস্তানে তালেবান সরকার এবং সবশেষে ইউক্রেন। সবই আপনার পররাষ্ট্র সচিব থাকার মেয়াদে। কোনটা সামলানো সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল মন্ত্রণালয়ের এবং ব্যক্তিগতভাবে আপনার?

উত্তর : প্রত্যেকটি যেন আলাদা আলাদা রকম কঠিন। অতিমারির ফলে ধারাবাহিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। গোটা বিশ্বে লকডাউনের ধাক্কা সামলানো, অন্য দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা এবং তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা, ওষুধ এবং অক্সিজেনের ঘাটতি মেটানো। বিদেশমন্ত্রকের মধ্যেই একটা কাঠামো তৈরি করতে হয়েছিল এই সমস্যাগুলোর নিরসন করতে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি, ভূরাজনৈতিক এবং মানবিক- দু ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করে। ভূকৌশলগত সমস্যার মোকাবিলা করা হয়েছে। দেরি না করে ভারতীয় নাগরিক এবং আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের ফেরানোর জন্য অপারেশন ‘দেবী শক্তি’ চালু করা হয়েছিল। একইভাবে ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে নিয়ে আসা খুবই কঠিন এক কাজ ছিল। ভারত-চিন সীমান্তে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা বুঝে চলেছি। চীনের আগ্রাসী পদক্ষেপগুলোর মোকাবিলা করতে হয়েছে। চীন একতরফাভাবে লাদাখের স্থিতাবস্থা লঙ্ঘন করেছে। সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতি নষ্ট করেছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো ভঙ্গ করার ফলাফল অবশ্যই আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পড়েছে।

প্রশ্ন : আপনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আজ কীভাবে ফিরে দেখেন।

উত্তর : আমার অন্তরে বাংলাদেশ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বৃদ্ধি শুধুমাত্র তাদের দেশবাসীরই নয়, গোটা অঞ্চলের বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মৈত্রীর সম্পর্কের এটাই ভিত। কার্যকরী সীমান্ত পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক সংযোগ বাড়ে। সীমান্ত পরিকাঠমোকে আরও জোরদার করা, পণ্য পরিবহন মসৃণ করা, সীমান্তে অবৈধ কাজকর্ম কমাতে দুই দেশের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করা প্রয়োজন। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি নদী প্রবাহিত। ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার আমরা অন্য নদীগুলোর চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছি।

প্রশ্ন : ইউক্রেন সংকটের মোকাবিলায় ভারত নিজের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির কথা বারবার বলছে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে এর কী প্রভাব পড়বে বলে মনে হয়? রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্য দেশের সম্পর্কে এর কি প্রভাব পড়বে? রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করেনি ভারত।

উত্তর : অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ইউক্রেনে সংঘাতকালীন আমাদের ধারাবাহিক সুদৃঢ় অবস্থানে যার প্রতিফলন রয়েছে। ইউক্রেনে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। হিংসা এবং সংঘাত যাতে অবিলম্বে বন্ধ হয় তার ডাক দিয়েছি। প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, কূটনীতি এবং সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আমেরিকাসহ সব বড় শক্তির সঙ্গে কথাবার্তায় আমরা জোর দিয়ে বলেছি, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর। ভারত এবং আমেরিকা উভয়েই এই মানসিকতায় বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক ভিডিও বৈঠক এবং ভারত-আমেরিকা টু প্লাস টু বৈঠকে তা প্রতিফলিত। এবারে আসি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির প্রশ্নে। আমাদের মোট অশোধিত তেল আমদানির দুই শতাংশেরও কম আসে রাশিয়া থেকে। তাছাড়া বিশ্বের সর্বাধিক তেল আমদানিকারী রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম ভারত তার নীতিনির্ধারণ করবে জাতীয় স্বার্থ এবং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা অনুযায়ী। অন্য কোনো বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন : ইউক্রেন সংকটের পর রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়বে বলেই মনে হয়। ভারতের জন্য যা খুব একটা খুশির খবর নয়। এই নিয়ে আপনার মতামত কী।

উত্তর : আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে সে ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। তার মধ্যে পড়ে রাশিয়া এবং চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও। আমরা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিবর্তনগুলো নিজের করছি যাতে নিজেদের নীতিনির্ধারণ করা যায়।

প্রশ্ন : পাকিস্তানে নতুন সরকার এসেছে। নওয়াজ শরিফের ভাই যার শীর্ষস্থানে। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

উত্তর : আমরা বারবার বলেছি, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে বকেয়া বিষয় মেটাতে চায়। কিন্তু কোনো অর্থপূর্ণ সংলাপ একমাত্র সুষ্ঠু আবহাওয়াতেই চালানো সম্ভব। সেই আবহাওয়া তৈরি করাটা পাকিস্তানের দায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন, সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলে শান্তি এবং সুস্থিতি চায় ভারত। একমাত্র তাহলেই আমরা উন্নয়নের দিকে মন দিতে পারব, মানুষের সুখ শান্তির জন্য কাজ করতে পারব।

Share This Article


ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহৃত মডেলের রাইফেল দিয়ে ট্রাম্পকে গুলি!

ছবি: টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস।

ট্রাম্পের ওপর হামলাকারী কে এই টমাস ম্যাথিউ

খান ইউনিসে ইসরাইলি গণহত্যা, মুখ খুললেন জাতিসংঘ মহাসচিব

৪৬ হাজার কোম্পানি বন্ধ, পতনের মুখে ইসরাইল!

ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনা হত্যাচেষ্টা: এফবিআই

ট্রাম্পের ওপরে হামলা, যা বললেন বাইডেন

গুলিতে আমার কান ফুটো হয়ে গেছে: ট্রাম্প

গাজায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ইদ্দত মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন ইমরান খান ও বুশরা বিবি

তিন ক্রু নিয়ে রাশিয়ায় যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত

ইসরায়েলি বাহিনী এলাকা ছাড়তেই বেরিয়ে এলো লাশের পর লাশ