আইনতভাবে অপমানিত ব্রোকেন ফ্যামিলির শিশু-কিশোররা !

নাম না হয় নাই বললাম। মেয়েটি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী । ২০১১ সালে মা-বাবার নাম দিয়েই তার জন্মসনদ করা হয়েছিলো। ওই সময় শিশুর জন্মসনদ পেতে মা-বাবার জন্মসনদের কোনো প্রয়োজন হতো না। এখন প্রয়োজন হয়। আর এতেই সমস্যার শুরু।
এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্মসনদের প্রয়োজন হওয়ায় পুরনো হাতে লেখা সনদের নম্বরটি অনলাইনে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। তখন জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয় থেকে তাঁকে নতুন করে আবেদন করতে বলা হয় এবং এর জন্য মা-বাবার জন্মসনদ চায়। কিন্তু মা-বাবার ডিভোর্স হওয়ায় বাবার সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাবার জন্ম সনদও দিতে পারছে না মেয়েটি।
এ প্রেক্ষিতে শিশুটিকে বলা হচ্ছে, নতুন জন্মসনদ নিতে ফরমে বাবার নামের জায়গায় ‘অজ্ঞাত বা অপ্রাপ্য’ লিখে দিতে। অভিভাবকরা বলছেন, অজ্ঞাত বা অপ্রাপ্য লিখলে নিবন্ধনে মেয়েটির পিতৃপরিচয় থাকবে না। আর এটা মেয়েটার জন্য চরম অপমানজনক। সামাজিকভাবে সে হেনস্তারও শিকার হবে। আর এই হেনস্তার রাস্তা করে দিয়েছে জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০১৩ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, পিতৃ-মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথবাসী বা ঠিকানাহীন বা যৌনকর্মী হলে নিবন্ধক তথ্যের ঘাটতির কারণে ওই ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না এবং এ ক্ষেত্রে যেসব তথ্য অসম্পূর্ণ থাকবে, সেসব স্থানে ‘অপ্রাপ্য’ লিখে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু আইনে মা-বাবার বিচ্ছেদ হলে সন্তানের জন্মসনদের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা নেই।
আইন সংস্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে একটি শিশু হয় মা অথবা বাবার সঙ্গে থাকে। এর ফলে দুজনের জন্ম নিবন্ধন জোগাড় করা একটি শিশুর জন্য প্রায়ই অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই এসব শিশুদের জন্য ভাবতে হবে নতুন করে। মা-বাবার ডিভোর্স নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন তাদের অপমানিত হতে না হয় সেই বিষয়টি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।