এসডিও থেকে সফল অর্থমন্ত্রী মুহিত

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:১৮, শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২, ১৭ বৈশাখ ১৪২৮
ফাইল  ফটো
ফাইল ফটো

অনলাইন ডেস্ক:
আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সফল ও রেকর্ডধারী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি টানা ১০ বারসহ মোট ১২ বার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আবুল মাল আবদুল মুহিত মহকুমা হাকিম (এসডিও) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রশাসন ও কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন শেষে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার কর্মজীবন শেষ করেন।

এএমএ মুহিত ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৬ সালে লাহোরস্থ সিভিল সার্ভিস একাডেমি হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। মহকুমা হাকিম (এসডিও) হিসেবে তার প্রথম কর্মস্থল ছিল মুলতান। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। তাছাড়াও ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অপ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬০-১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান  সিভিল সার্ভিসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত থাকাকালীন ১৯৬৬ সালে মুহিত সরকার কর্তৃক তমগা-এ-খেদমত খেতাবে ভূষিত হন। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা কমিশন প্রধান ও ডেপুটি সেক্রেটারি থাকাকালে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রদান করেন। প্রতিবেদনটি পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে প্রদত্ত পূর্ব ও পশ্চিম বৈষম্য প্রসঙ্গে প্রথম প্রতিবেদন।

১৯৬৯ সালে জনাব এএমএ মুহিত যুক্তরাষ্ট্রস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের ইকনমিক কাউন্সিলর পদে যোগদান করেন। তখন গড়ে উঠে ১৯৬৯ সনের গণ অভ্যুত্থান। ১৯৭০ এর নির্বাচন ও পাকিস্তানিদের বৈরিতা তাকে ব্যথিত করে তোলে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনিই প্রথম পাকিস্তানি কূটনৈতিক যিনি বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানে এর কূটনৈতিক দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি ও জাতিসংঘ সংস্থাসমূহে কার্যক্রম শুরু করেন। তাছাড়া ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদ এ কাজ করে নন্দিত হন।

মুহিত ১৯৮২-১৯৮৩ সালে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে তিনি তৎকালীন সরকার থেকে অবসর গ্রহণ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো হিসেবে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে মুহিত নিজ এলাকা সিলেটকে ’আলোকিত সিলেট’ এ রূপায়ণের স্বপ্ন নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

এএমএ মুহিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। প্রত্যক্ষভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে জয়ী না হলেও তিনি ’আলোকিত সিলেট’ গড়ার লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেকে একজন নিরলস কর্মীতে রূপান্তরিত করেন।

বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ সংসদীয় আসনের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

এএমএ মুহিত অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেছে।

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের ধোপাদীঘির পাড়ের নিজেদের বাড়িতে জন্ম আবুল মাল আবদুল মুহিতের। দাদা খান বাহাদুর আবদুর রহিম ব্রিটিশ ভারতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন আইনজীবী। মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী গৃহিণী।

মুহিতের সবচেয়ে বড়ভাই প্রয়াত জনাব এএমএ মসিহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। তার ছোটভাই একে আবদুল মুবিন সাবেক সচিব ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি। অনুজ এএমএ মুইজ বিমাবিদ, ফুয়াদ প্রবাসী ব্যাংকার, ছোটবোন ডা. শাহলা খাতুন জাতীয় অধ্যাপিকা, ছোটবোন শিপা হাফিজা ও রিও আজিজা সমাজকর্মী। তার বড়বোন সবার আদরের আধার হয়ে বেঁচে আছেন। তার ছোটভাই ড. একে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মুহিতের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে সামিয়া মুহিত আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, বড় ছেলে শাহেদ মুহিত স্থপতি এবং ছোট ছেলে বিদেশে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। মুহিতের সহধর্মিণী সৈয়দা সাবিহা মুহিত একজন ডিজাইনার।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হিসেবে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। তিনি টানা ১০টি বাজেট উপস্থাপনের রেকর্ডও গড়েছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় সংসদের ৪৮তম, নিজের ১২তম ও শেষ বাজেট উপস্থাপন করেন মুহিত।

সূত্র জানায়, স্বাধীন বাংলাদেশে টানা ১০ বার বাজেট পেশ এর আগে কোনো অর্থমন্ত্রীর করার সুযোগ হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৩৯তম বাজেট পেশ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় সংসদের ৪৮তম, নিজের ১২তম ও শেষ বাজেট উপস্থাপন করেন মুহিত। এছাড়া মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে এর আগে এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ দুই অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন।

২০১৮-১৯ সালে বাজেট পেশের আগে গণমাধ্যমে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ইতোমধ্যে বাজেট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছি। টানা ৯টি বাজেট দিয়েছি। কোনো অর্থমন্ত্রী এর আগে টানা ছয়টির বেশি বাজেট দেননি। বাকি আছে আর একটি বাজেট। এটি দিলে টানা ১০টি। আর মোট বাজেট উপস্থাপন হবে ১২টি। তাতে অতীতের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলব।

Share This Article


‘রাতেই বাসা-বাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হতে পারে’

‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে’

চার দফা না মানলে আট দফা নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই

প্রাথমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রবিরোধী

তালিকা হচ্ছে গা-ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের

আত্মগোপনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার আনা এখন সময়ের দাবি: আরেফিন সিদ্দিক

আন্দোলনকারীদের থেকে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের নিজগৃহে অবস্থানের অনুরোধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

‘কোটা সংস্কার নিয়ে প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস হতে পারে’

মহাসড়ক অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ