বেলা সাড়ে ১১ টার মধ্যে জাপানি দুই শিশুকে হাজিরের নির্দেশ

জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আপিল বিভাগে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার সকালে জাপানি মায়ের আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শিশুদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
শিশু দুটির বাবার বিরুদ্ধে তাদের মা আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ আনার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এমন আদেশ দেন।
শিশু দুটির মায়ের মায়ের আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার রাত ১০টার মধ্যে দুই শিশুকে মায়ের কাছে দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি বাবা শরীফ ইমরান। এই নির্দেশনা না অমান্য করার অভিযোগ আনার পর আদালত এমন আদেশ দেন।
গত ২১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে তার বসবাস ও কর্মস্থল সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিন বার বাংলাদেশে তার যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ শিশু দুটির বাবাকে বহন করত হবে। তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে খরচ মা নিজে বহন করবেন। এছাড়া বাবা মাসে কমপক্ষে দুই বার শিশু সন্তানদের ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন।’
এছাড়া গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত বাবদ ওই মাকে ১০ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে এই শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখতে এবং প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে জাপানে থাকা এদের আরেক মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে ইমরান শরীফের করা রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাদের সাথে ছিলেন আইনজীবী ফেরজা পারভিন, কাজী মারুফুল আলম ও ফাইজা মেহরিন। আর জাপানি মা এরিকো নাকানোর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, তার সাথে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন।
আদালতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) ও ইমরান শরীফ (৫৮) ২০০৮ সালের ১১ জুলাই দুজনের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী টোকিওতে বিয়ে করেন। এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
এই দম্পতির ১১, ১০ ও ৭ বছর বয়সী তিন মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়ত। তবে বিভিন্ন কারণে দাম্পত্য বিবাদের জেরে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন শিশুদের মা এরিকো।
সন্তানদের জিম্মায় চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে গত ২৮ জানুয়ারি মামলা করেন এরিকো। এর মধ্যেই গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। এরপর গত ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন নাকানো এরিকো। এরপর হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত একটি রিট করেন।