বাংলাদেশের চীন নীতিতে উদ্বিগ্ন ভারত: অবাস্তব শঙ্কা প্রকাশ! (ভিডিও)
মোহাম্মাদ এনামুল হক এনা: চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কিনা- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের এমন প্রশ্নের জবাব ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বেশ কড়াভাবেই দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয় এমন অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণে ঋণ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভাবতে হবে৷ এ নিয়ে উদ্বেগ না থাকলে ভঙ্গুর অবকাঠামোই তৈরি হবে৷’’
ইউরোপের দেশ জার্মানির মিউনিখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আলোচনা চলাকালে এমন মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জয়শঙ্কর বলেন,‘‘আমাদের এই অঞ্চলের অনেক দেশের ওপর দেনার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে চীন। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও টেকসই নয় এমন সব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে৷’’ তবে মোমেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে উন্নয়ন চলছে, এই বাস্তবতায় কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন৷ জনগণও আরো অবকাঠামো চায়৷’’
এ বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনীতিক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ চীনের কাছে পাকিস্তানের মতোই বন্ধক হয়ে যায় কিনা এটা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্নতা আছে৷ বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে তাই তারা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে আছে৷ কিন্তু ভারত তো কোনো বিকল্প দিতে পারছে না৷ জয়শঙ্কর যে বলেছেন অবাস্তব প্রকল্প, ভারতীরাও তো অবাস্তব প্রকল্প দেয়৷
তারা এমনভাবে প্রকল্প দেয় যে বালু সিমেন্টও তাদের কাছ থেকে নিতে হয়৷ এর চেয়ে তো অবাস্তব কিছু হতে পারে না৷ আমাদের চীনারা সেগুলোই দেয় যেগুলো আমাদের এখানে নেই ৷ ভারত তো আমাদের এমনিতে দিচ্ছে না ৷ আমাদের তো ফেরত দিতে হবে ৷ ভারতকে আমাদের যা দেয়ার দিয়েছি, এখন তাদের উচিত প্রতিশ্রুতি পুরণ করা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকও একই ধরনের কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলছে ৷ কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগ করেছে কত? এক বিলিয়ন ডলারের বেশি তারা এখনো দেয়নি৷ আর বাংলাদেশে যে চীনা বিনিয়োগ তা কি অবাস্তব?’’
‘‘ভারত এখন বাংলাদেশকে একটু চাপে ফেলতে চাইছে, যাতে চীনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখে৷ যেহেতু র্যাব-পুলিশের সাত সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশকে একটু চাপে ফেলেছে, সেই সুযোগে তারা একটু সুবিধা নিতে চায়৷’’ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এ রাষ্ট্রদূত।
উল্লেখ্য, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ (কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ) এর সূচনা হয়। ‘কোয়াড’-এ বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে জোটে থাকা চার দেশের পাশাপাশি চীনও। তবে, বাংলাদেশ শুরু থেকেই এ বিষয়ে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে।