১৫ বছর পর মা-বাবাকে খুঁজে পেয়েছে টুক্কুনি

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৭, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩ আশ্বিন ১৪৩০

হারিয়ে যাওয়ার ১৫ বছর পর মা-বাবা ও নিজ পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে মমতাজ বেগম টুক্কুনি। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানার সার্বিক সহযোগিতায় টুক্কুনি খুঁজে পায় তার বাবা-মা ও পরিবারকে। মমতাজ বেগম টুক্কুনির বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কাগমারীপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল হাসেম।

জানা যায়, ১৫ বছর আগে বকশীগঞ্জ উপজেলার কাগমারিপাড়া গ্রামের আবুল হাসেমের কন্যা টুক্কুনি ওরফে মমতাজকে কাজের মেয়ে হিসেবে ঢাকায় পাঠানোর জন্য একই গ্রামের শাবুল মিয়া পার্শ্ববর্তী পাখিমারা গ্রামের নেহার বেগমের কাছে দেন। নেহার বেগমের মেয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। পরে নেহার বেগম তার মেয়ের বাসার কাজের মেয়ে হিসেবে টুক্কুনিকে ঢাকায় পাঠান।

ঢাকায় নেহার বেগমের মেয়ের বাসায় কাজ করাকালীন ছয় বছর বয়সে ১৫ বছর আগে হারিয়ে যায় টুক্কুনি। নিজের বয়স মাত্র ছয় বছর হওয়ায় জামালপুর জেলার নাম ছাড়া নিজ বাড়ির ঠিকানাও বলতে পারেনি টুক্কুনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও টুক্কুনিকে খুঁজে পাননি তার বাবা আবুল হাসেম।

পরে তাকে লালন-পালন করে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেয়। দাম্পত্য জীবনে টুক্কুনি বর্তমানে ৩ সন্তানের জননী। স্বামীর সংসার করার পাশাপাশি তার মা-বাবাকে খুঁজতে থাকে টুক্কুনি। কোনো উপায় না পেয়ে টুক্কুনির স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।  বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মমতাজ বেগম টুক্কুনির ঠিকানা বের করার উদ্যোগ নেন।

এর অংশ হিসেবে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম শাহীন আল আমীনসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তা চান। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি ব্যাপক প্রচার করলে মমতাজ বেগম টুক্কনির ঠিকানা, বাবা-মা ও পরিবারের লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যায়।

এর পরেই টুক্কুনির স্বামীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ টুক্কুনির পরিবারকে দেন। সেই ঠিকানা অনুযায়ী টুক্কুনির বাবা আবুল হাসেম ও মা সইরেফুলি বকশীগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে টুক্কুনিকে খুঁজে পান।

সেখান থেকে টুক্কুনিকে তার স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে তার বাবা হাসেম ও মা সইরেফুলি বকশীগঞ্জ উপজেলার কাগমারীপাড়া গ্রামে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। ১৫ বছর পর টুক্কুনি বাড়ি ফেরাটা পরিবারের লোকজন ও এলাকার লোকজনের কাছে মিলনমেলায় পরিণত হয়। মা-বাবাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা টুক্কুনি। মেয়েকে ফিরে পেয়ে বাবা-মাও মহাখুশি। ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় টুক্কুনির বাবা-মা আনুষ্ঠানিকভাবে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং ১৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিস্তারিত জানান।  

এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, সৎ ইচ্ছা থাকলে সব কিছু করা সম্ভব। টুক্কুনির বেলায়ও তা-ই ঘটেছে। তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া এবং বাবা-মায়ের সন্ধান পাওয়া খুব কঠিন ছিল। কিন্তু পুলিশ ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে টুক্কুনি তার পিতৃপরিবারের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এই মিলনমেলায় টুক্কুনির পরিবারের পাশাপাশি পুলিশও খুশি। টুক্কুনির পরিবারের পাশে পুলিশ সব সময় থাকবে। ঘটনার বিষয়ে তার পরিবার আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে আইন মোতাবেক পুলিশ টুক্কুনির পরিবারের পাশে থেকে সহায়তা করবে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article