ফ্রান্সের সাথে লেনদেনে কি পেলো বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) করোবি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়। এরমধ্যে একটি হল ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট বা ঋণ চুক্তি এবং অপরটি হল বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এর মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট চুক্তি।
বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশেষ করে রেল খাতের উন্নয়নে ফ্রান্স সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও দেশটি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সাইবার নিরাপত্তা, পানি শোধনাগার, পরিবেশ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেয়ার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স। এছাড়া জলবায়ু মোকাবিলায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা দেবে দেশটি। সেইসাথে সামুদ্রিক সম্পদ বাড়াতে কাজ করবে দুই দেশ। মহামারি মোকাবিলাতে দেশটি বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো লোন দিয়েছে এবং প্রায় ৫.৩৮ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাক্সিন সহায়তা দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। দেশটির সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ফ্রান্স-বাংলাদেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। চলমান কোয়াড-চায়না দ্বন্দ্ব এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভৌগোলিক অবস্থান এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে অবস্থানের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে ফ্রান্স নিজস্ব কৌশলনীতি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি যৌথ বিবৃতিতে ‘নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক’ অঞ্চল নীতির প্রতি বিশ্বাসের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স-বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চাইছে দেশ দুটো।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর পর ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় সফর। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় আসেন তিনি। বিমানবন্দরে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দিনের সফর শেষে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়েছেন ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট।