পহেলা বৈশাখে জঙ্গিদের হামলার হুমকি উড়িয়ে দিলো র্যাব!
বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ। পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। এই দিনটি ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ছক আঁকতে থাকে উগ্রপন্হী জঙ্গি গোষ্ঠি। এবারও পহেলা বৈশাখ নিয়ে মাথাচাড়া দেয়ার ইঙ্গিত পেয়েছে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। তবে বাংলা নববর্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে র্যাব। এমনটিই জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।
নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে রাজধানীর রমনা বটমূলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে র্যাবের সব ব্যাটালিয়নসহ নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন।
জানা যায়, ১১ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি সংবলিত একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবতাহী রহমান (২৫) নামে এক শিক্ষার্থী এ চিরকুটটি পান। চিরকুটে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কাজটা শিরকের। এখানে এসে ক্ষতি করো না তোমাদের। হামলা হতে পারে এনি টাইম। ঐ দিনের দাজ্জালি বাহিনী পাবে না টের মোদের।’ এ ঘটনায় ১২ এপ্রিল সকালে ওই শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।তবে চিঠিটিকে দুষ্ট ছেলেদের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপি কমিশনার।চিঠিটির সাথে জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া যায়নি।
২০০১ সালে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ওই হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলে আঘাত হানতে মৌলবাদী গোষ্ঠী সেই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল। এর পর থেকেই প্রতিটি বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।এবারও নিরাপত্তা বলয়েই থাকবে পুরো ঢাকা।
অন্যদিকে গত ৯ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের জামায়াতপন্হী আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান। এই নোটিশে দাবি করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা অসাংবিধানিক, বেআইনি ও কৃত্রিমভাবে উদ্ভাবিত। লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে—স্বরাষ্ট্র, ধর্ম এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। নোটিশে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করা না হলে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এখনও সাম্প্রদায়িক শক্তির একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রখর নজরদারির কারণে এই ষড়যন্ত্র ফলপ্রসু হয়ে ওঠে না। ওই চক্রটি এখনও সরকার বিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফলকাম হতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেবারই এ উৎসব সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এরপর থেকে বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে এটি। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। পরে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করে এ শোভাযাত্রা।