রমজান: দেহ-মন-আত্মার যত্ন-প্রক্রিয়া

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৩৬, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩, ২৮ চৈত্র ১৪৩০

রমজান কোরআন নাজিলের মাস, দোয়ার মাস, দানের মাস, সেবার মাস জৈবিকতার শৃঙ্খল মুক্তির মাস। নিজের যত্ন নেয়ার মাস এবং দেহ মন ও আত্মার পুরোপুরি যত্ন নেয়ার সুযোগ এ মাসেই সবচেয়ে বেশি।

আল্লাহর রহমতের ছায়ায় প্রকৃতিতেও একটা সিক্ত স্নিগ্ধ শীতল আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এক অনাবিল প্রশান্তি লাভ করেন দোয়ায় নিমগ্ন ধ্যানীরা।

বিশ্বাসীদের জন্যে কোরআন যেভাবে শেফা ও রহমতস্বরূপ!

আমরা বলছিলাম রমজান কোরআন নাজিলের মাস দোয়ার মাস। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, আসলে কোরআন কী? বিশেষজ্ঞরা নানানভাবে এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন।

রমজান যেহেতু নিজের যত্ন নেয়ার মাস, এই আলোকে সূরা বনি ইসরাইলের ৮২ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে আমরা বলতে পারি, বিশ্বাসীদের জন্যে কোরআন শেফা ও রহমত স্বরূপ।

শেফা : মনোজাগতিক ও আত্মিক বিভ্রান্তি-বিকৃতি থেকে মুক্তি

প্রশ্ন করতে পারেন, শেফা কী? এর উত্তর একটু ব্যাপক।

‘শেফা’ শুধু দেহের রোগ নিরাময় নয়, শেফা হচ্ছে সবধরনের মনোদৈহিক মনোজাগতিক মনোসামাজিক ও আত্মিক ব্যাধি বিকার বিভ্রান্তি ও বিকৃতি থেকে মুক্তি।

‘মনোজাগতিক’ শব্দটিকে আমরা একজন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিগত ধ্যান-ধারণাগত বিভ্রান্তি বিকার ও বিকৃতি বলতে পারি।

‘শেফা’ শব্দের অর্থটি আপনি এভাবেও করতে পারেন যে, কোরআন ইজ এ কিওর ফর অল সর্টস অব সাইকোসোম্যাটিক সাইকো-ইন্টালেকচুয়াল সাইকো-সোশ্যাল সাইকো-স্পিরিচুয়াল এলিমেন্ট এন্ড পারভার্শন।

অর্থাৎ এক অর্থে কোরআন হচ্ছে, দেহ মন আত্মার পরিপূর্ণ যত্ন নেয়ার দিক-নির্দেশক ম্যানুয়াল। এবং কোরআনের এই ম্যানুয়াল অনুসরণ করলেই অর্থাৎ কোরআন অনুসরণ করলেই আপনি পাবেন ‘টোটাল ফিটনেস’।

রহমত : দুই কালের শান্তি নিরাপত্তা ও কল্যাণের অনন্ত আশ্রয়

রহমত হচ্ছে শান্তি নিরাপত্তা ও কল্যাণের অনন্ত আশ্রয়। যা ইহকাল ও পরকাল দুইকালেই। অর্থাৎ কোরআনে জীবনযাপনের যে ম্যানুয়াল দেয়া আছে তা অনুসরণ করলে ইহকাল এবং পরকাল দুইকালেই সুস্থতা শান্তি নিরাপত্তা ও অনন্ত কল্যাণ লাভ করতে পারবেন।

দোয়া : সকল ইবাদতের নির্যাস

আমরা বলছিলাম রমজান দোয়ার মাস। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, দোয়া কী? উত্তরটা খুব সহজ!

দোয়া হচ্ছে আপনার যত ইবাদত, সকল ইবাদতের নির্যাস। তাই যত ইবাদত উপাসনা আরাধনা যা-ই করেন উপসংহার টানবেন দোয়া বা প্রার্থনা দিয়ে।

রমজানের সারা মাস যখন সময় পান পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আন্তরিকতার সাথে দোয়া করুন। দোয়া করার সময় সবসময় আল্লাহকে খুব কাছে ভাববেন। খুব কাছে খুব কাছে ভাববেন। অনুভব করবেন তিনি আপনার কথা শুনছেন।

বিনয় ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তার কাছে নিজের আকুতি পেশ করবেন। নির্দ্বিধায় বলবেন, ব্যক্তিগত কোনো অক্ষমতা প্রকাশে দ্বিধা করবেন না, কোনো সংকোচ করবেন না। কারণ তিনি সব জানেন তারপরও তিনি চান আপনি মুখ ফুটে আপনার সব কথা আপনি বলুন।

তিনি যেহেতু সর্বশক্তিমান মহামহান, তিনি সব পারেন। আপনার যে-কোনো যৌক্তিক ইচ্ছাপূরণ করা তাঁর জন্যে মোটেই বড় কিছু নয়। তাই কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেতিবাচকতার প্রশ্রয় দেবেন না। তিনি দোয়া কবুল করবেন এই পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তাঁর কাছে চাইবেন।

কারণ আল্লাহ বান্দা যে রূপে তাকে ভাবে, তিনি সে রূপেই তার জীবনে প্রতিভাত হন। তাই সবসময় ভাববেন, আপনি তাঁর রহমতের ছায়ায় আছেন সবসময় বলবেন ।

দেহমন আত্মার যত্নায়নে এবারের রমজানের করণীয় কী?

সঙ্ঘবদ্ধভাবে দান করুন

প্রিয় সুহৃদ! আমরা বলছিলাম রমজান দানের মাস। আসলে সবধরনের ভালো ব্যবহার ভালো আচরণ ভালো কথা ভালো পরামর্শ সবই হচ্ছে দান। অন্যের কল্যাণে করা প্রতিটি কাজ হচ্ছে দান। দান বলেন সেবা বলেন সাদাকা বলেন একই জিনিস।

আর রমজানে যে-কোনো দান বা সেবার নেকি শুরু হয় ৭০ গুণ বেশি। আর যখন সঙ্ঘবদ্ধভাবে কোনো দান সেবা বা সাদাকা করা হয় তখন সাতশ গুণ ৭০ এর ওপর আবার গুণ হয় ৭০। অতএব সঙ্ঘবদ্ধ ভালো কাজ ভালো দানের গুরুত্ব এবং নেকির পরিমাণ আপনি নিজেই বুঝতে পারছেন।

দানের মধ্যে যাকাত হচ্ছে ফরজ দান। তাই রমজানে যাকাত আদায় আরো সওয়াবের।

মনে রাখবেন যাকাত কিন্তু ঐচ্ছিক দান নয়। ফরজ দান। এটি ঈমান ও নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যাকাত আদায় না করলে আপনার নামাজ নিষ্ফল। তাই প্রথম সুযোগেই যাকাত আদায় করুন। আল্লাহর কাছে দাতার তালিকায় নাম লেখান।

যাকাত না দেয়ার জন্যে হিসাবের ফাঁক-ফোকর বের করবেন না। আপনার সব খরচের পরে ৫৫ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকলেই আনন্দিতচিত্তে আড়াই শতাংশ হারে যাকাত আদায় করুন।

সুন্নত হিসেবে সবধরনের দানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন!

নবীজী (স) রমজান মাসে সবধরনের দান বাড়িয়ে দিতেন। তাই নবীজীর (স) সুন্নত হিসেবে এমাসে সবধরনের দানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। এতিম দুস্থ বিধবা প্রবীণের সেবার জন্যে প্রয়োজনীয় দান সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ুন। নবীজী (স) দুর্গত মানুষের কল্যাণে বেরিয়ে পড়াকে একমাস এতেকাফের চেয়েও উত্তম মনে করতেন।

এই প্রসঙ্গে তার বিখ্যাত হাদীস, তাবারানী শরীফে উদ্ধৃত ইবনে ওমর (রা) বর্ণিত হাদীস হচ্ছে-

একজন নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী?

নবীজী জবাব দিলেন যার দ্বারা মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় সেই আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে কোনো দুর্দশাগ্রস্তের দুর্দশা দূর করা। ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করা ক্ষুধার্তের ক্ষুধা নিবারণ করা।

এরপর নবীজী (স) বলেন, আর আমার কাছে কাউকে সাহায্য করার জন্যে তার সাথে হেঁটে যাওয়া মদিনার মসজিদে একমাস এতেকাফ করার চেয়েও বেশি কাঙ্ক্ষিত।

Share This Article