বিলিয়ন পেরিয়ে ট্রিলিয়ন ডলারে বাংলাদেশ!
বেশিদিন আগের কথা নয়, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ছিল উপেক্ষিত ও অনালোচিত দেশ। বাংলাদেশকে তুলনা করা হতো 'বটমলেস বাস্কেট কেস’র সঙ্গে। তবে বিগত এক যুগ ধরে শেখ হাসিনা সরকার দেশের এই দুর্নামটি শুধু দূরই করেননি, ঘুরিয়ে দিয়েছেন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা। জবাব দিয়েছেন সমালোচকদের।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৯ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সময়কালে চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যাও ৪৩ শতাংশ থেকে কমে ১১.৯ শতাংশ হয়েছে। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব না হলে দারিদ্র্যের হার আরো অনেক কমতো বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্রমতে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৯০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২২ সালে তা ৪৬০ বিলিয়ন ডলার পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে দেশের জিডিপির আকার পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়েছে। এ সময়ে বেড়েছে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। বিকশিত হয়েছে দেশের অর্থনীতি।
এদিকে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার সবগুলো মানদণ্ড এইরমধ্যে পূরণ করেছে বাংলাদেশ এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পথে আছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এবং এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের রহস্য কী?
গত কয়েক দশকে সরকারের বিভিন্ন উদ্যেগে বেসরকারি খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক সংস্কার, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, উন্নত অবকাঠামো ও এদেশের মানুষের উদ্যোক্তাসুলভ মনোভাব।
অর্থনৈতিক সংস্কার: অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার বেসরকারি খাতে ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং আর্থিক পরিষেবা ও বিমা ব্যবসার অনুমোদন দেয়। সরিয়ে নেয়া হয় বিদেশি বিনিয়োগের ওপর থেকে বিধিনিষেধ। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ জোগাতে কর হ্রাস ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করা হয়।
রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন: ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশ রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের দিকে মনোনিবেশ করে। ফলে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও ওষুধের মতো শিল্পের বিকাশ ঘটে। এটি দেশকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করেছে।
উন্নত অবকাঠামো: বাংলাদেশ রাস্তা, সেতু ও বন্দরের মতো অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার, যা শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে সহজতর করেছে। বিশেষ করে পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলোর প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে সহজ হয়েছে এর ফলে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ এখন বিস্ময়করভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছে। তারা বলেন,বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বও বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই সমালোচিত হলেও দেশকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।