বৃদ্ধি পাচ্ছে রিজার্ভ: বেড়েই চলেছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স !
করোনা মহামারীর ধ্যক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনীতি। বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ কমায় গতি কমেছে আন্তর্জাতিক লেনদেনের। বন্ধ হতে চলেছে অনেক দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। বিশ্ব মন্দার ধাক্কা লাগে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। এক বছরের মধ্যেই দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই দেশের রিজার্ভের গতিতে হওয়া লেগেছে। পরিমাণে কম হলেও বাড়তে শুরু করেছে দেশের রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ১৫ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ আরো বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে কমছে আমদানিও। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে টার্গেট নির্ধারণ করেছে, তাতে জুনে রিজার্ভ বেড়ে দাড়াবে সাড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলার।একদিকে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।অন্যদিকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও বেড়েই চলেছে। সামনে রোজা ও ঈদ। তিনি মনে করেন, আগামী কয়েক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বাড়বে। এতে রিজার্ভ আরও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ফিরবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার বা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতি মাসে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়ে ১৯৬ কোটি ডলারে ঠেকেছে। আগের মাস ডিসেম্বরে যা ১৭০ কোটি ডলারের নিচে ছিল।
আগের তিন মাস নভেম্বর, অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ এবং ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ৬ হাজার ৭৭০ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি।
আমদানি কমাতে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন, তদারকি জোরদারসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারে নেমেছে। ফলে সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর গৃহীত পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে আগামীতে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। এদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সর্বশেষ যে পূর্বাভাস দিয়েছে, সেখানেও ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অর্থনীতির দেশের তালিকায় সবার ওপরে রেখেছে বাংলাদেশকে।