২৬৫২ কোটি টাকায় বদলে গেছে নওগাঁর যোগাযোগ ব্যবস্থা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:০৪, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪ ফাল্গুন ১৪২৯

আব্দুর রউফ পাভেল, নওগাঁ

২৬৫২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে গেছে নওগাঁর যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এক স্বপ্নীল নগরী হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলাটি। এতে মানুষের জীবনযাত্রায় গতি এসেছে। পাল্টে গেছে এই অঞ্চলের সার্বিক চিত্র। জেলার মানুষজন কম সময়ে সহজে যেতে পারছেন অন্য জেলায়।

 

বর্তমান সরকারের ২০০৯ থেকে টানা ১৪ বছরে দীর্ঘ-মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এমন পরিবর্তন এসেছে। প্রশস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, সড়কবাতি এবং নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন জেলার মানুষজন।


গত ১৪ বছরে জেলায় ৯৩১ কোটি পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টাকায় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পাশাপাশি এক হাজার ৭২১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকার ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।


নওগাঁ-যোগাযোগ-১
প্রশস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের ফলে উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন জেলার মানুষজন
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৩২ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকায় জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার টাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীন ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর জরুরি পুনর্বাসন প্রকল্প, ২২ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকায় নজিপুর-ধামইরহাট  এবং জয়পুরহাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৬৫ কোটি ২২ লাখ টাকায় নওগাঁ-বদলগাছী-পত্নীতলা সড়ক উন্নয়ন এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

পাশাপাশি ১২০ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ টাকায় পত্নীতলা-সাপাহার-পোরশা-রহনপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ছয় কোটি ৮৩ লাখ ৫২ হাজার টাকায় জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (রাজশাহী জোন) আওতায় জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছী সড়কের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়েছে।  

এ ছাড়া সাত কোটি ৩৩ লাখ টাকায় জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (রাজশাহী জোন) আওতায় পত্নীতলা-শিবপুর লিংক সড়কের উন্নয়ন, ৪২৬ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোর যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (রাজশাহী জোন), ১০৩ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় জেলার মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকায় পিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় বগুড়া-নওগাঁ-মহাদেবপুর-পত্নীতলা-ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের চৌমাশিয়া থেকে মোল্লাকুড়ি পর্যন্ত ওভারলেকরণ, ১৪ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার টাকায় নওগাঁ-বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়া-নওগাঁ-মহাদেবপুর-পত্নীতলা-ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের এইচবি বিকরণ এবং রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণকাজ, ছয় কোটি ৭৫ হাজার টাকায় মান্দা-বাগমারা-আত্রাই সড়কের আহসানগঞ্জ সেতু নির্মাণ, পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় গোদাগাড়ী-নাচোল-নিয়ামতপুর সড়কের চৌরাপাড়া সেতু নির্মাণ এবং পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার টাকায় পিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় গোদাগাড়ী-নাচোল-নিয়ামতপুর সড়কের নিয়ামতপুর সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।  

নওগাঁ-যোগাযোগ-৩
জেলায় ৯৩১ কোটি পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টাকায় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নওগাঁর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে জানালেন নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‌‌‘জেলায় ১৪ বছরে ৯৩১ কোটি পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব‍্যয়ে সড়ক এবং সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের অনেক বড় সাফল্য। এসব সড়ক ও সেতু নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে পুরোপুরি বদলে যাবে এই অঞ্চলের সার্বিক চিত্র।’

অপরদিকে, চলমান ছয়টি প্রকল্প হচ্ছে—২৯২ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় নওগাঁ সড়ক বিভাগের একটি আঞ্চলিক এবং দুটি মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ। এই প্রকল্পের আওতায় বদলগাছী- পাহাড়পুর-জয়পুরহাট সড়কের নওগাঁর অংশে কাজ হবে। দ্বিতীয়টি ১৯৮ কোটি ৯৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ। তৃতীয়টি ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮১ হাজার টাকায় পিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় এনায়েতপুর-মহাদেবপুর-পাটাকাটাহাট-মান্দা সড়ক উন্নয়নকাজ, চতুর্থটি ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় পিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় চৌমাশিয়া ও আব্দুল জলিল পার্ক এবং বশিপুর মোড়ে ইন্টার সেকশন নির্মাণকাজ, পঞ্চমটি ১৯ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকায় পিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় পত্নীতলা-সাপাহার-পোরশা-রহনপুর সড়কের উন্নয়নকাজ এবং ষষ্ঠটি এক হাজার ১৮২ কোটি ৪৯ লাখ ১৫ হাজার টাকায় নওগাঁর তিনটি আঞ্চলিক ও তিনটি মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ।

এখনও ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে

সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে সহজে জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারছি উল্লেখ করে আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা ময়নুল হক বলেন, ‘একদিকে যাতায়াতে সময় যেমন কম লাগছে, আবার আমাদের উৎপাদিত পণ্য যথা সময়ে বাজারে নিয়ে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি।’

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে সহজে জেলা সদর এবং রাজশাহীতে যাতায়াত করতে পারছি বলে জানালেন পত্নীতলা উপজেলার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরা শহরে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে। কৃষিপণ্য সকালে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দুপুরের মধ্যে গ্রামে ফিরতে পারছেন উপজেলার কৃষকরা।’

Share This Article