আবেদনের অর্ধেকই ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্টে ভারতে চিকিৎসা ভিসা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৫, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ২ ফাল্গুন ১৪২৯

জিয়াউল গনি সেলিম,রাজশাহী


ভারতে চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন করতে গেলে প্রয়োজন পড়ে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সম্প্রতি এ ধরনের আবেদন যাচাই করতে গিয়ে দূতাবাসসংশ্লিষ্টরা দেখেছেন, প্রায় অর্ধেক পরিমাণ আবেদনই করা হচ্ছে ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে। এসব ঘটনার সঙ্গে ভিসা অফিসের কর্মকর্তাদেরও সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বগুড়া ভারতীয় ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ইনচার্জসহ দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকায় রাজশাহী থেকে দুজ কে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।

 

সম্প্রতি ভারতের মেডিক্যাল ভিসার আবেদন করেন লালমনিরহাটের মাহেন্দ্র চিনিপাড়ার আকমল উদ্দিন দুলু। এতে তিনি ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. থমাস মাথাইয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তথ্য যুক্ত করেন। তবে আবেদন যাচাইয়ের সময় হাসপাতালের প্যাডে দেওয়া কিউআর কোডটি স্ক্যান করে দেখা যায় এটি অন্য রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১০০টি মেডিক্যাল ভিসার আবেদনের কাগজপত্র যাচাই করে ৫০টি আবেদনেই ভুয়া মেডিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে। দ্রুত ভিসা পাওয়ার কৌশল হিসেবে তা ব্যবহার করা হয়। তবে ভুয়া কাগজে ভিসা নিয়ে ভারতে সত্যি সত্যি চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।

ভারতের একটি হাসপাতাল থেকে এই ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকেই কেউ এ রকম ভুয়া পত্র তৈরি করে রোগী পাঠাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঠাকুরগাঁও ভিসা অফিসের পাশের মি. রায় নামের এক ব্যক্তি এক হাজার টাকার বিনিময়ে এ ধরনের ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে বিক্রি করেছেন। এ রকম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এক রোগীর কাছ থেকে তার তথ্য পেয়েছে তারা।

এদিকে, ভুয়া কাগজে ভিসা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়া ভিসা অফিসের ভিসা নির্বাহী সবিতা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীর সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ে তলব করা হয়। এক ব্যক্তির সঙ্গে তার ফোনালাপের রেকর্ড বাজিয়ে তাকে শোনানো হলে তিনি তা স্বীকার করে নেন। সেখানে তাকে ভিসার দরদাম করতে শোনা যায়।

ভিসা প্রতারকচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়া কার্যালয়ে কর্মকর্তা নাফিস আহমেদ ও নিরাপত্তাকর্মী বেলালকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন রাজশাহীতে নিযুক্ত সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার। তিনি বলেন, এখন মাত্র তিন থেকে পাঁচ কর্মদিবসেই রোগীরা ভিসা পাচ্ছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এমন উদারতার সুযোগ নিয়েছে প্রতারকরা। ভিসাপ্রত্যাশীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রকৃত ডকুমেন্ট থাকলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাই দালাল বা প্রতারকদের শরণাপন্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের ভুয়া আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরির অভিযোগে রাজশাহী থেকে শেখ এনামুল হাসান তাসিন (২০) ও রায়হান কবির (২১) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। মহানগরীর বর্ণালী মোড়ের রহমান লাইফ সলিউশন নামে একটি কম্পিউটারের দোকানে ভুয়া কাগজ বানানোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ের হেলাল আলী নামে এক ভিসাপ্রত্যাশীর কাছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে ভারতের একটি মেডিক্যালের জাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে দেয় তারা। অবেদন জমা দেওয়ার পর হেলাল বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে অভিযোগ করা হলে সোমবার তাদের দুইকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

Share This Article