কপোতাক্ষপারে সপ্তাহব্যাপী উৎসব

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:১১, বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১ মাঘ ১৪২৯

বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার। ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ পারের সাগরদাড়ি গ্রামে জমিদার দত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। 

 

মাইকেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাড়িতে বসেছে সপ্তাহব্যাপী মধু মেলা। এবারের মধু মেলায় মধুমঞ্চে কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার পাশাপাশি থাকছে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের পরিবেশনা। রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। থাকছে কুটির শিল্পসহ গ্রামীণ পসরা। আর এবারের মধু মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘কৃষি মেলা’।

মাইকেলের বাবা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত আর মা জাহ্নবী দেবী। মহাকবি ‘পদ্মাবতী’ নাটক, ‘একেই বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসন, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনাকাব্য’, ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ রচনা করেন। ১৮৫৩ সালে মধুসূদন খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন থেকে তাঁর নামের সঙ্গে ‘মাইকেল’ যুক্ত হয়। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী এ মধু মেলার আয়োজন করছে যশোর জেলা প্রশাসন। মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে মধু মেলার উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, মো. নাসির উদ্দীন, কাজী নাবিল আহমেদ, রণজিত কুমার রায়, মো. শাহীন চাকলাদার, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল প্রমুখ।

মেলার দ্বিতীয় দিন ‘মধুসূদনের স্বদেশ চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবোধ’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার।

মেলার তৃতীয় দিন আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ূন কবীর। বিশেষ অতিথি থাকবেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা, যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দ।

মেলার চতুর্থ দিন ‘মধুসূদনের জীবন ও সাহিত্য’ বিষয়ে আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। বিশেষ অতিথি থাকবেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এম এ রশীদ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য।

মেলার পঞ্চম দিন ‘বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের নাটক’ বিষয়ে আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আহসান হাবীব। বিশেষ অতিথি থাকবেন যশোর সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিএল কলেজের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।

মেলার ষষ্ঠ দিন ‘মধুসূদন ও মেঘনাদবধ কাব্য’ বিষয়ে আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক শাহিদা সুলতানা ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। মেলার শেষ দিন সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য মো. শাহীন চাকলাদার। বিশেষ অতিথি থাকবেন কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম রুহুল আমীন, সাংবাদিক শ্যামল সরকার, কেশবপুর থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান এবং সাগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুল ইসলাম।

মধু মেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষ নদ পারে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সাগরদাড়ির পাশের গ্রাম আওয়ালগাঁতি গ্রামের তুহিন রেজা বলেন, মেলা উপলক্ষে তাঁর বোন-ভগ্নিপতিদের দাওয়াত করেছেন। কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম বলে, সাগরদাড়ি মেলা দেখার জন্য খুলনা থেকে তার ছোট মামা-মামিসহ মামাতো ভাই-বোনরাও আসবেন।

সাগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত জানান, মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসীর মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সাগরদাড়িসহ অন্য ইউনিয়নগুলোতেও চলছে নানা আয়োজন।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article