সম্মানহানির প্রতিশোধ নিতে মেয়েকে খুন!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:১৫, রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮ মাঘ ১৪২৯

পালিয়ে বিয়ে করায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানি হওয়ায় মেয়েকে হত্যা করেন বাবা আব্দুল কুদ্দুস খাঁ। হত্যার দায় জামাতার ওপর চাপাতে মামলা করেন তিনি।

 

৭ বছর আগের এই হত্যা রহস্য উন্মোচনের পর আজ রোববার সকালে ধানমন্ডির পিবিআই হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার আদালতে কুদ্দুসের দেওয়া জবানবন্দি তুলে ধরেন।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে বনজ কুমার বলেন, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গড়িয়ার বাসিন্দা আব্দুস কুদ্দুসের মেয়ে পারুল আক্তারের (১৫) সঙ্গে একই এলাকার নাছির উদ্দীন সরকারের (১৯) সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ২০১২ সালে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। এই বিয়ে পারুলের পরিবার মানতে পারেনি।

এদিকে পারুল ও নাছির আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে পাশের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন। সাংসারিক জীবনে শুরু হয় টানাপোড়েন। একপর্যায়ে পারুল তার বাবাকে মোবাইলে ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চান। মেয়েকে সুন্দর ভবিষ্যৎ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসে স্বামী নাছিরকে ছেড়ে চলে আসতে বলেন কুদ্দুস। ২০১৫ সালে ১৮ জুলাই স্বামীকে না জানিয়ে বাবার কাছে চলে যান পারুল।

পরদিন কুদ্দুস মেয়ে নিয়ে যান ভূঞাপুরে তার বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডলের বাড়িতে। সেখান থেকে মোকা মণ্ডল ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কিছুদিন তার স্বামী নাছিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় তুলসীগঙ্গা নদীর পাশে একটি নির্জন স্থানে অন্ধকারে পারুলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তার বাবা। এরপর বন্ধু মোকা মণ্ডলের সহযোগিতায় পারুলের ওড়না দুই টুকরা করে হাত-পা বেঁধে গলা টিপে হত্যা করেন তারা।

এরপর জামাতা নাছির ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে একটি গুমের মামলা করেন পারুলের বাবা। মামলার তদন্তে কালিহাতী থানা-পুলিশ প্রেমের বিয়ের সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ভুক্তভোগী পারুলকে না পাওয়ায় এবং ঘটনাস্থল কালিহাতী থানার আওতাধীন না হওয়ায় এই মামলা তাদের এখতিয়ারের বাইরে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরে পারুলের বাবা কুদ্দুসের বারবার নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডি সদস্যরা তদন্তে নামেন। তারাও কোনো কুলকিনারা করতে না পেরে একই প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে।

এরপর কুদ্দুস খাঁ আগের তদন্তের রেফারেন্সসহ মামলা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে। অভিযোগ করা হয় নাছির উদ্দীন যৌতুকের জন্য তার মেয়ে পারুলকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। গত ডিসেম্বরে দায়ের করা এই মামলার তদন্ত ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তদন্তে নেমে একটি মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এগোতে থাকে সংস্থাটি। প্রথমে গফরগাঁও বর্তমান কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পারুলের স্বামী নাছিরকে। তারপর ডাকা হয় পারুলের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। নাছিরসহ পারুলের পরিবারের সবাই অসংলগ্ন তথ্য দিতে থাকেন। দুই পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পারুলের বাবা তার বন্ধু মোকা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে পারুলকে নিজ হাতে হত্যার কথা স্বীকার করেন পিবিআইয়ের কাছে। এরপর আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেন।

পিবিআই প্রধান কুদ্দুসকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ‘এটি একটি অনার কিলিংয়ের ঘটনা। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা কুদ্দুসের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সম্মানহানি হয়। তাই শাস্তি হিসেবে তিনি মেয়েকে খুন করেন। কিন্তু এই সম্মানহানির পেছনে তার মেয়ের সঙ্গে জামাতা নাছিরেরও সমান হাত আছে। তাই মেয়ের মতো জামাতা নাছিরকেও শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন কুদ্দুস।

তিনি (কুদ্দুস) চেয়েছেন এই খুনের মামলায় নাছিরের যেন ফাঁসি হয়। তাহলেই তার সম্মানহানির প্রতিশোধ সম্পূর্ণ হবে। এই জন্যই নিজে মেয়েকে খুন করেও বিভিন্ন পর্যায়ে আইনি লড়াই করেছেন তিনি।’

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ রিমান্ড শেষে কারাগারে

রাজধানীতে দলনেতাসহ 'কিশোর গ্যাং'র ৩৭ সদস্য গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের রহস্যজনক মৃত্যু

জবিতে হিযবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণের সময় ঢাবি শিক্ষার্থী আটক

খাগড়াছড়িতে বাইক থামিয়ে আরোহীকে গুলি

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি হতে খরচ ত্রিশ হাজার টাকা

বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ মোহাম্মদপুরের ৩৯ কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেপ্তার

ফেসবুকে নারী সেজে প্রতারণার অভিযোগে যুবক আটক

‘দুবাইয়ের পণ্য’ তৈরি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে, বিক্রি সারাদেশে

অপহরণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হলেও গ্রেফতারে পিছপা হয়নি প্রশাসন

চায়ের দোকানে ২ ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা