ইজতেমার প্রথম পর্বের মোনাজাতে যা বলা হলো

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৯:০০, রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১ মাঘ ১৪২৯

তুরাগ নদের তীরে কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো ইজতেমার প্রথম পর্ব। আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন লাখো মুসল্লি। রোববার সকাল ১০টার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় ২০ মিনিটের মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।

 

মোনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, নিরাপত্তা, শান্তি, ঐক্য, মুক্তি এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে কাকুতি মিনতি জানানো হয়।

গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে সকালের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অপার করুণা ও অশেষ রহমত কামনা করেছেন দেশ-বিদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

মোনাজাতপূর্ব সমাপনী বয়ান: ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা আখেরি মোনাজাতপূর্ব সমাপনী বয়ান পেশ করেন। তিনি তার বয়ানে বলেন, আমাদের ইবাদত সুন্দর করতে হবে। ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজ। নামাজ যেন সুন্নত তরিকায় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, নবি করিম (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন আমাদের নামাজও যেন সেরকম করতে হবে। কারো দেখা দেখি নামাজ পড়া যাবে না। নামাজ পড়তে হবে খুশু-খুযুর সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাদের মধ্যে যাদের মাল দিয়েছেন তারা যেন মালের হক আদায় করি। আমাদের মালের মধ্যে অন্যের হক রয়েছে। তাই মাল দিয়ে অন্যের হক আদায় করতে হবে। সবাইকে দ্বীনের উপর চলতে হবে। আর মানুষকে দ্বীনের উপর আনতে হলে দাওয়াতের মেহনত করতে হবে। তিনি বলেন, নিজের জিন্দেগীর গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ কাছে কান্নাকাটি ও রোনাজারি করে দোয়া করতে হবে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদের অতীতের কৃতকর্ম ক্ষমা করে দেবেন।

ইজতেমার প্রথম পর্বের মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইলের মুরব্বি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের।

সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে শুরু করে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ২৩ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে অযুতকন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহীম আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরির, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশা-গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

দক্ষিণে খিলক্ষেত, উত্তরে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ও পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত বিশাল জনসমুদ্র থেকে সকালের আকাশ কাঁপিয়ে ধ্বনি উঠে- ‘হে আল্লাহ, হে আল্লাহ।’

মোবাইল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে। গুনাহগার, পাপী-তাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন।

সকাল থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ৯টা ৫৭ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে।

আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে সব পথের মোহনা হয়ে উঠে তুরাগ তীরের ইজতেমা নগরী। রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সব কিছু ছিল বন্ধ। সবার প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের সাথে মোনাজাতে শরিক হয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২৩ মিনিটের আবেগঘন মোনাজাতে হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের প্রথম ১০ মিনিট পবিত্র কুরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৩ মিনিট তিনি বাংলা ও উর্দু ভাষায় দোয়া করেন।

মোনাজাতে যা বলা হল: প্রথম ১০ মিনিট আরবিতে এবং পরে ১৩ মিনিট বাংলা ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের।

মোনাজাতে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমরা গুনাহগার। আমাদের জিন্দেগীর গুনাহ খাতা মাফ করে দেন। হে আল্লাহ, আপনার কাছে আমরা তওবা করতেছি। সকলের গুনাহ আপনি মাফ করে দেন। হে আল্লাহ, আমাদের ইমানী জিন্দেগী নসীব করে দেন। আমাদের ইমানকে মজবুত করে দেন, ইমানের উপর অটল রাখেন। হে আল্লাহ, আপনার নাফরমানি থেকে আমাদের বাঁচান।

হে আল্লাহ, আখলাককে সুন্দর করে দেন। হে আল্লাহ, বিশ্বের সকল মুসলমানের জান-মাল, ইমান, আমল, ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করেন। হে আল্লাহ, আমাদের ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-হানাহানি খতম করে দেন।

হে আল্লাহ, আমাদের দিলের মধ্যে মহ্ববত তৈরি করে দেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রতি রাজি-খুশি হয়ে যান। হে আল্লাহ, সারা দুনিয়াকে রক্ষা করেন। হে আল্লাহ, আমাদের পেরেশানি দুর করে দেন। হে আল্লাহ, সারা দুনিয়ায় ইজতেমার দাওয়াতি কাজ পৌঁছে দেন।

হে আল্লাহ, বাতিলের সব চক্রান্তকে নষ্ট করে দেন, দুনিয়াতে ফেতনা-ফ্যাসাদের চক্রান্ত বন্ধ করে দেন। হে আল্লাহ, সারা দুনিয়ার মানুষকে হকের ওপর কায়েম করেন। হে আল্লাহ, হক্ক ওয়ালাদের রহমত করেন।

হে আল্লাহ, যারা রোগে আক্রান্তদেরকে শেফা দান করেন। হে আল্লাহ, বিশ্ব ইজতেমাকে কবুল করেন। হে আল্লাহ, বাংলাদেশকে রক্ষা করেন, ইজতেমায় সাহায্য-সহযোগিতাকারীদের কবুল করেন। হে আল্লাহ, আমাদের দোয়া কবুল করেন।' 

Share This Article