বাংলাদেশের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্রের 'ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল'!
- যুক্তরাষ্ট্রের 'ইন্দো-প্যাসিফিক' কৌশলে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক ও সামরিক বিবেচনায় হয়তো বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকরও হতে পারে।
- সামগ্রিক বিবেচনায় ' ইন্দো-প্যাসিফিক' কৌশল দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যানকর হবে কিনা সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
- যেহেতু সরকার ইতিমধ্যে তা শুরু করেছে, কাজেই বলা যায় বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে
গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপান সফরের সময় ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো ফোরাম (আইপিইএফ) গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ফোরামে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালেও যুক্ত হওয়ার বিষয়টি তখন স্পষ্ট করেনি বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উর্ধতন প্রতিনিধির সাম্প্রতিক সফরে বিষয়টি আবার আসছে বাংলাদেশের টেবিলে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলেন লবাখ বাংলাদেশ সফরের এসেও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তখনও নিশ্চুপ ছিল বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ১৪ জানুয়ারী দুই দিনের সফরে বাংলাদেশ সফরে এলেও 'ইন্দো-প্যাসিফিক' ইস্যুতে আলোচনা গুরুত্ত্ব পাচ্ছে।তবে প্রশ্ন আসছে এবারও কি নিশ্চুপ থাকতে পারবে বাংলাদেশ?
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক ভাবনা ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে। এতে নিরাপত্তা, সামরিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকেও বাংলাদেশ রয়েছে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে। বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। তাই এ ফোরামে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ভালো। তবে সমস্যা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ বরাবরই সামরিক কোনো বলয়ে যোগ দেওয়ার বিপক্ষে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগ এমনকি ইন্দো-প্যাসিফিকের আওতায় অর্থনৈতিক উদ্যোগ নিয়েও চীনের জোরালো সন্দেহ ও আপত্তি আছে। চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মূল লক্ষ্য চীনকে ঠেকানো। আর এখানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোই থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে বোঝাপড়া বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই দেশকে একসঙ্গে সন্তুষ্ট রাখা খুব চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ সেই কাজটিই করে যাচ্ছে। এ ফোরামে যোগদানের ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে কি না তা যাচাই-বাছাই চলছে। এই ফোরাম নিয়ে নীতিগতভাবে বাংলাদেশের আপত্তি নেই। তবে এতে যোগ দিলে কী লাভ হবে তা এখনও অস্পষ্ট। বিষয়টি তাই বোঝার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন , যুক্তরাষ্ট্রের 'ইন্দো-প্যাসিফিক' কৌশলে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক ও সামরিক বিবেচনায় হয়তো বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকরও হতে পারে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় ' ইন্দো-প্যাসিফিক' কৌশল দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যানকর হবে কিনা সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।যেহেতু সরকার ইতিমধ্যে তা শুরু করেছে, কাজেই বলা যায় বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।