বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩০, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ২৬ পৌষ ১৪২৯

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লাউবেখার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়াতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে কাজ করছে। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী, যাতে বাংলাদেশ নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তাসনিম মহসিন

 

সমকাল :বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ এই চুক্তি থেকে কী ধরনের সুবিধা পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?


এইলিন লাউবেখার :দুই দেশ অংশীদারিত্ব সংলাপ, দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ, দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ, তিন স্তরের সামরিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারদের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে তাদের সক্ষম করে তোলা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করায় বিশ্বাস করে। তবে একটা বিষয় আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, এই মুহূর্তে কোনো ব্যাপক পরিসরের প্রতিরক্ষা চুক্তি বা জোটবিষয়ক আলোচনা হচ্ছে না। আমি বিশ্বাস করি, একটি অবাধ ও উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে; যেমনটা রয়েছে অন্য অনেক দেশের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের উভয় দেশের সুবিধা ও স্বার্থে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ধারণাগুলোকে স্বাগত জানাই।

সমকাল :আপনি জানেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসওএমআইএ এবং এসিএসএ চুক্তির প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ জিএসওএমআইএ স্বাক্ষরের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত। এসিএসএর বেলায় তাহলে কী ঘটেছে? আর জিএসওএমআইএ স্বাক্ষরের সর্বশেষ অবস্থা কী?

এইলিন লাউবেখার :প্রথমেই আমি স্পষ্ট করতে চাই, জিএসওএমআইএ হলো সম্মত বা ঐকমত্য হওয়া; এটি কোনো চুক্তি নয়। এটি সংবেদনশীল সামরিক তথ্য দেওয়া-নেওয়া, সুরক্ষার জন্য করণীয় ও মূল নীতিমালা নির্ধারণ করবে। সামরিক তথ্যের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ধরনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পরিচালনায় সক্ষম করে তোলে। বর্তমানে আমাদের দুই দেশের মধ্যে জিএসওএমআইএ না থাকার কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক ধরনের যুদ্ধবিমান, সংশ্নিষ্ট অস্ত্রসহ আরও বেশি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করতে পারছে না। জিএসওএমআইএ হয়ে গেলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক করতে পারবে, যা ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে অবদান রাখবে। বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসওএমআইএ রয়েছে।

আমরা বিভিন্ন স্তরে জিএসওএমআইএ সম্পন্ন বা সমাপ্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। লক্ষ্য করবেন, আমি এখানে সম্পন্ন বা সমাপ্ত করার কথা বলেছি। ঐকমত্যে পৌঁছার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একে অন্যের নিরাপত্তা ধারণার পারস্পরিক মূল্যায়ন ও বোঝাপড়া দরকার। এ জন্য সময় লাগে। জিএসওএমআইএ এমন কোনো চুক্তি নয় যে রাতারাতি স্বাক্ষরিত হবে। বরং এটি হলো অংশীদারিত্বের চেতনায় একটি বিষয়।

এসিএসএ থেকেও উভয় দেশ মূল্যবান সুবিধা পেতে পারে। এসিএসএ থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ প্রয়োজনের সময়, যেমন দুর্যোগকালে সহজেই একে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে যেতে পারবে। সহজেই একে অন্যকে লজিস্টিকস সহায়তা দিতে এবং প্রশিক্ষণ ও যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এসিএসএ রয়েছে। এসিএসএ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে জিএসওএমআইএ এখন আগে সম্পন্ন করার কথা ভাবা হচ্ছে।

সমকাল :এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। সে ক্ষেত্রে শুধু জিএসওএমআইএ স্বাক্ষরই কি এ ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য যথেষ্ট? নাকি বাংলাদেশকে এসিএসএ স্বাক্ষর করতে হবে?

এইলিন লাউবেখার :যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য বা সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী, যাতে বাংলাদেশ নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলকে আরও বেশি সুরক্ষিত করার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা থাকে। ফলে এটি শুধু কোনো পণ্য বিক্রি নয়; তার চেয়ে বেশি কিছু। চুক্তির ক্ষেত্রে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক ও সংবেদনশীল সামরিক তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার জন্য এসিএস চুক্তি থাকাটা পূর্বশর্ত নয়। জিএসওএমআইএ থাকাই যথেষ্ট।

সমকাল :একজন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে বঙ্গোপসাগর নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? আপনার মতে, বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে কী ধরনের নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিতে পারে?

এইলিন লাউবেখার :এ অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সেসব মোকাবিলায় কঠোর পরিশ্রম করছে। আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সবার যৌথ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, সমৃদ্ধ, সহিষুষ্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আমাদের যৌথ অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জের কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে চলেছে।

সমকাল :বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের জন্য বর্তমানে ও আগামী দিনগুলোতে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া আর কী ধরনের নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিতে পারে?

এইলিন লাউবেখার :নিরাপত্তা হুমকির একটি উদাহরণ হলো সন্ত্রাসবাদ। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে অবশ্যই সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সন্ত্রাস মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়াতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভ কাজ করে চলেছে, যা আমাদের সবাইকে নিরাপদ রাখছে। এ ছাড়াও আমাদেরকে অবশ্যই রাষ্ট্রের ক্ষতিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যদি শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় রাশিয়ার নৃশংস আগ্রাসনের দিকে তাকাই, তাহলেই বুঝতে পারি কেন আমাদের নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি গড়ে তোলা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক, অপ্ররোচিত ও অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মানবিক ক্ষতি অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। এতে শুধু যে ইউক্রেনের জনগণ কষ্ট পাচ্ছে, তা নয়। একই সঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে পুরো বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। যন্ত্রণা সহ্য করছে।

[ জিএসওএমআইএ-GSOMIA-General Security of Military Information Agreement-সামরিক তথ্য বিষয়ে সাধারণ নিরাপত্তা সমঝোতা]
[এসিএসএ-ACSA-Acqusition of Cross-Servicing Ageement-বকেয়া ঋণ আদায় সংক্রান্ত সমঝোতা]

Share This Article