কারাগার হবে সংশোধনাগার:মিলবে সকল মানবিক ও নাগরিক সুবিধা
একজন অপরাধীকে সমাজ থেকে দুরে রাখতে তাকে কারাগারে আটকে রাখলেও তার মানবিক ও নাগরিক সকল সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে।
দেশের কারাগারগুলোকে ‘সংশোধনাগার’এ রূপান্তর করতে ‘বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইন-২০২৩’এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি কার্যকর হলে দেশের কারাগারগুলোতে আসবে আমূল পরিবর্তন। কারাবন্দিদের মিলবে নিজ বাড়িঘরের মতোই সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া বন্দিরা কারাগারেই ভোগ করবেন অন্যান্য নাগরিক সুবিধাও।
যেসব পরিবর্তন আসবে :
প্রতিটি কক্ষে থাকবে মানসম্মত বিছানাপত্র, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু প্রবেশের ব্যবস্থা। মিলবে স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের সুযোগ। নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থাকবে আবর্জনা ফেলার বাক্স। আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ এবং বিছানাপত্র। পাশাপাশি পোশাক ধোয়ার জন্য সাবান ও সেলাইয়ের উপকরণ দেয়া হবে। এমনকি বন্দির আবাস্থল সপ্তাহে একবার জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়ামোছাও করা হবে।
সূত্রমতে বর্তমানে দেশের ৫৫ টি কারাগারের জন্য রয়েছেন মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক । নতুন ব্যবস্থায় বন্দিদের জন্য থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স এবং কারাগারের জন্য আলাদা হাসপাতাল। সেসব হাসপাতালে হবে সব ধরনের চিকিৎসা।
বন্দিদের মধ্যে গর্ভবতী নারী, নবজাতক কিংবা মায়ের সঙ্গে অবস্থানরত শিশুও তাদের বিশেষ স্বাস্থ্য চাহিদা অনুসারে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।
বিধি মোতাবেক বন্দিরা ব্যাংক চেক ও অন্যান্য আইনগত দলিলে স্বাক্ষর, টিপসই প্রদান করতে পারবেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বন্দিরা কারাগারের বাইরের অতিরিক্ত পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া প্রত্যেক কারাগারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে এক বা একাধিক ক্যান্টিন পরিচালিত হবে। বন্দিরা ব্যক্তিগত অর্থে খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারবেন।
বন্দিরা যাতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিপালন করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত স্ব-স্ব ধর্মীয় পুস্তকাদি পাঠের সুবিধার্থে নিজ হেফাজতে রাখতে পারেন সেই ব্যবস্থাও থাকবে। তাই প্রত্যেক কারাগারে একটি করে পাঠাগার থাকবে। প্রয়োজনে কারা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় গণগ্রন্থাগারের সহযোগিতা এবং সরকারি গণগ্রন্থাগার থেকে বই সংগ্রহ করতে পারবেন।
অন্যদিকে কারাগারে প্রশিক্ষণ শুরু করা বন্দির মেয়াদ শেষ হলে মুক্তির পরও তিনি প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করার সুযোগ পাবেন। এই কোর্স বন্দির অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের যোগ্যতা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন অপরাধীকে সমাজ থেকে দুরে রাখতে তাকে কারাগারে আটকে রাখলেও তার মানবিক ও নাগরিক সকল সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে। যে কারণে উন্নত দেশের কারাগার গুলোয় এমন ব্যবস্থা রাখা হয়, যেন তারা মানবিক সকল সুবিথা ভোগ করেন এবং অপরাধ প্রবন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসেন।তাই কারাগার যেনো এক ধরণের সংশোধনাগারে রূপান্তরিত হয় সে লক্ষ্যেই 'বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইন-২০২৩’এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।