বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:১০, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬ পৌষ ১৪২৯

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী মাঠ ছেড়ে আরও আগেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলে গেছে নতুন জায়গায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরে স্থায়ী জায়গায় বাণিজ্যমেলার আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত। মেলাস্থলে চলছে শেষ সময়ের ফিনিশিংয়ের কাজ। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারে এরই মধ্যে চলছে সাজ সাজ রব।

এক্সিবিশন সেন্টার ‘এ’ ও ‘বি’ এর ভেতরে ও বাইরে শতাধিক স্টল নির্মাণের কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। কাঠ, বাঁশ, হার্ডবোর্ড দিয়ে বানানো হচ্ছে অস্থায়ী স্টল। স্টিল, ইট ও কংক্রিট দিয়ে বহুতল প্যাভিলিয়নের গাঁথুনির কাজও শেষ পর্যায়ে। দিন-রাত এক করে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। আগামী ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করে তা সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে দিতে হবে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আয়োজন।

পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারে বসবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ফাইল ছবি)পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারে বসবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ফাইল ছবি)

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও করোনার পর ব্যবসার পরিবেশ গত বছরের চেয়ে ভালো বলে এবার জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  তারা বলছেন, শেরেবাংলা নগর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বাণিজ্যমেলার পূর্বাচলের এই জায়গা। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিএফটিএফ) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখানে। মেলায় যাতায়াতের জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মূল সড়কের (তিনশ ফিট) প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ চার লেনে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত বছরের মতো এবারও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিআরটিসির ডাবল ডেকার ৩০টি লাল বাস। যেগুলো কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত চলাচল করবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সাল থেকে যৌথ উদ্যোগে মেলার আয়োজন করেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্যমেলা। সেবার বাণিজ্য মেলায় শিশুপার্ক ছিল না। এবার মিনি শিশুপার্ক থাকছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে।

কী কী থাকছে মেলায়

ইপিবি জানিয়েছে, মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুডস্টল ও রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে অতীতের মতো এবারও থাকবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবারের মেলায় ১২টি দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এক্সিবিশন সেন্টার ‘বি’ তে ২০টির বেশি স্টল বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। যার প্রত্যেকটিই ২০ ফুট বাই ২০ ফুট। হার্ডবোর্ডের পাশাপাশি স্টেনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্টলগুলোর কাঠামো।

বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার (ফাইল ছবি)বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার (ফাইল ছবি)

ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মেলায় ৩০৯টি স্টলের জায়গা রয়েছে। তবে এবারও বসছে দেশি-বিদেশি ২২৫টি স্টল। মেলা কেন্দ্রের লেআউটে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। এ কারণেই কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে মিলে আপাতত ২২৫টি স্টল করা হয়েছে। মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কর্তৃপক্ষ ভেতরে ১৫৪টি স্টল বানিয়েছে। আর বাইরে থাকছে ৭১টি স্টল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্থানে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় আগতদের গাড়ি রাখার জন্য বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। সেন্টারের দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। আর এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ রয়েছে।

কী বলছেন ব্যবসায়ীরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় এবছরের মেলা অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। আমাদের প্রস্তুতিও ভালো। তবে শেরেবাংলা নগরের মতো বাণিজ্যমেলা জমতে সময় লাগবে। এর জন্য প্রচারণা দরকার। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার (ফাইল ছবি)বঙ্গবন্ধু-চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার (ফাইল ছবি)

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার পরিধি বেড়েছে। বেড়েছে অবয়বও। তবে সেভাবে বাড়েনি এর প্রচারণা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার প্রচারণা বাড়াতে হবে। সহজ করতে হবে মেলাস্থলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। করোনা পরবর্তী বাণিজ্য মেলা এবছর অবশ্যই ভালো হবে। মেলায় বেশি মানুষের সমাগম হবে বলেও আশা করছি। 

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, মেলায় বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। এবারের আয়োজন ভালো। করোনা সংকট কাটিয়ে এবারের বাণিজ্যমেলা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কারণ দেশের রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্যমেলার অবদান অনেক। এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। মেলাস্থলে দর্শক, ক্রেতা বিক্রেতাদের যাবতীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। ভেন্যুটি নতুন হওয়ায় এর কিছুটা প্রচারণাও প্রয়োজন।

বাণিজ্যমেলায় যাওয়ার রুট বাণিজ্যমেলায় যাওয়ার রুট

উল্লেখ্য, করোনার কারণে ২০২১ সালে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মেলা হয় এখানে।

১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখ দেশের সরকারপ্রধান এ মেলার উদ্বোধন করেন।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article