পবিত্র জুমার মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৫, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

পবিত্র জুমার দিনের মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে একটি সুরা নাজিল করেছেন। সুরাটিতে জুমার দিনের করণীয় ও ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনাবেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত ০৯)।

 

 

আল্লাহ নভোমণ্ডল এবং ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। জুমার দিন। এই দিনেই হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়, এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে দেওয়া হয়, এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নির্বাসিত করা হয়। আর এ দিনেই সংঘটিত হবে কেয়ামত। এ দিনের এমন একটি সময় আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে তা কবুল হয়। সুবহানাল্লাহ। রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা সবশেষে এসেও কেয়ামতের দিন সবার আগে অগ্রগামী থাকব। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব, যদিও তাদের আমাদের আগে কিতাব প্রদান করা হয়েছিল, আর আমরা কিতাব পেয়েছি তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়ে হয়েছিল।

এরপর আল্লাহ আমাদের তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি (জুমার দিন) তারা এতে মতভেদ করেছে। এরপর আল্লাহ আমাদের এই দিনের সঠিক হেদায়েত দান করেছেন। তা হলো জুমার দিন। সুতরাং আজ আমাদের, কাল (শনিবার) ইহুদিদের আর পরশু (রবিবার) নাসারাদের।’ (বুখারি ও মুসলিম)। জুমার দিন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হলে দ্রুত নামাজ আদায়ের জন্য গুরুত্বসহকারে মসজিদে যাও এবং নামাজ আদায় ও খুতবা শোনার জন্য যত্নবান হওয়া উত্তম। প্রত্যেকটি মুসলমান আজান শোনার পর নামাজ ও খুতবা ছাড়া অন্য কোনো কাজের প্রতি যেন মনোযোগী না হয়। জুমার দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে হাজির হওয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করবে এবং নামাজ আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কোরবানির করার সওয়াব অর্জন করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে মসজিদে এসে হাজির হলো সে একটি গরু কোরবানির সওয়াব অর্জন করল, আর যে তৃতীয় সময়ে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হলো সে একটি শিংওয়ালা ছাগল কোরবানির সওয়াব অর্জন করল। যে চতুর্থ সময়ে গেল সে একটি মুরগি জবাই করার সওয়াব এবং পঞ্চম ব্যক্তি একটি ডিম ভাজি করার সওয়াব অর্জন করল।’ সুবহানাল্লাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন নামাজ (জুমার) শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার।’ (সুরা জুমা, আয়াত ১০)।

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এই বার্তাই দিলেন যে, জুমার নামাজ আদায়ের পর তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরে যাও। রিজিকের সন্ধান কর। শুধু নামাজের বিরতিতে তোমরা মসজিদে গমন কর এবং আল্লাহর স্মরণে নিজেকে সমর্পিত কর। আমাদের মনে রাখতে হবে জুমার নামাজ হলো কেয়ামত দিবসের মহড়া। কেয়ামতের ময়দানে আমাদের সবাইকে আল্লাহর সামনে সমবেত করা হবে। সেদিন আমরা সবাই থাকব অসহায়। সাপ্তাহিক এই দিনটি হলো সেই দিনেরই মহড়াবিশেষ। জুমার দিনে হাতের নখ কাটা, উত্তমরূপে গোসল করা, পরিষ্কার ও পবিত্র পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে আগে যাওয়া, দাঁত মেসওয়াক করা সুন্নাত। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত ‘তাহইয়াতুল মসজিদে’র নামাজ আদায় করা এবং মনোযোগসহকারে ইমাম সাহেবের খুতবা শোনা অতি উত্তম।  জুমার দিনে সবচেয়ে বড় আমল হলো সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা ও বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবন করে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।

Share This Article