মানবশরীরে প্রথমবারের মতো দেয়া হলো গবেষণাগারে বানানো রক্ত

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:৪১, সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২, ২২ কার্তিক ১৪২৯

প্রথমবারের মতো গবেষণাগারে বানানো রক্ত দেয়া হয়েছে মানবশরীরে। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে দুজন মানুষের শরীরে ওই রক্ত প্রবেশ করিয়েছেন। খুব অল্প পরিমাণে রক্ত ব্যবহার করা হয়েছে এ পরীক্ষায়। এখন বিজ্ঞানীরা তাদের ওপর পর্যবেক্ষণ করছেন। 

রক্তের সেলের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সহজে মেলে না এমন রক্তের গ্রুপের মানুষ আছে পৃথিবীতে। তাদের কথা চিন্তা করেই গবেষণায় বেশ জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 

এমনও অনেক রোগ আছে যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে হয় নির্দিষ্ট সময় পর পর। সিকেল সেল অ্যানিমিয়া ওই রোগগুলোর একটি। এতে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার একপ্রকার জিনগত অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ নেতৃত্বে চলছে রক্ত নিয়ে এই গবেষণা। ফুসফুস থেকে যেসব লোহিত রক্ত কণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে তাদের নিয়েই করা হচ্ছে এ গবেষণা।

প্রাথমিকভাবে দুই দুজন স্বেচ্ছাসেবী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, সবমিলিয়ে এতে অংশ নেবেন ১০ জন। চার মাসের ব্যবধানে এই স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে দুই ধরনের অর্থ্যাৎ সাধারণ রক্ত ও গবেষণাগারে বানানো রক্ত প্রবেশ করানো হবে। এর ফলের ওপর নির্ভর করেই এগোবে গবেষণা। তাদের রক্তে সামান্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মেশানো হয়েছে, যাতে করে তা কতদিন মানুষের শরীরে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ রক্তদানের জন্য সবসময়ই মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে এই গবেষণার লক্ষ্য হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল গ্রুপের রক্ত কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা। সিকল সেল অ্যানিমিয়া' রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। এ চিকিৎসায় সুপরিচিত এ, বি, এবি এবং ও গ্রুপ ছাড়াও আরও জটিল টিস্যু-ম্যাচিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। যদি দাতা ও গ্রহীতার রক্ত হুবহু না মেলে তাহলে এই চিকিৎসা আর কাজ করে না। 

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক অ্যাশলি টয় বলেন, কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ এতোটাই বিরল যে পুরো দেশে মাত্র ১০ জনের মতো ব্যক্তি তা দান করার উপযোগী হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, এই মুহূর্তে পুরো যুক্তরাজ্যতে 'বম্বে' গ্রুপের মাত্র তিন ইউনিট রক্ত সংগ্রহে রয়েছে। এই গ্রুপটি সর্বপ্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাসলে ট্রয়ী বলেন, এমন কয়েকটি রক্তের গ্রুপ আছে যা সত্যি বিরল। এসব কথা বিবেচনায় রেখেই আমরা ভবিষ্যতে যতটা সম্ভব রক্ত তৈরি করতে চাই।

যেভাবে রক্ত তৈরি করা হয়: প্রথমে ৪৭০ মিলিলিটারের মতো রক্ত সাধারণ ডোনেশনের মধ্যমে নেয়া হয়। এরপর চুম্বক গুটি ব্যবহার করে সেখান থেকে সেসব স্টেম সেল আলাদা করে  নেয়া হয়, যেগুলো লোহিত রক্ত কণিকায় পরিণত হতে সক্ষম। পরে এই স্টেম সেলগুলোকে পরীক্ষাগারে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা হয় ও লোহিত কণিকায় পরিণত করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। 

পাঁচ লাখ স্টেম সেল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করা যায়। তবে এখানেই শেষ নয়। এই লোহিত কণিকাগুলোকে ফিল্টার করে দেড় হাজার লোহিত কণিকা পাওয়া যায় যেগুলো ট্র্যান্সপ্লান্টের জন্য উপযুক্ত। মানুষের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা ১২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। রক্তদানের ক্ষেত্রে সাধারণত নতুন ও পুরনো লোহিত কণিকার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। অধ্যাপক অ্যাশলি টয় বলেন, এভাবে ভবিষ্যতে যত বেশি পরিমাণে সম্ভব রক্ত উৎপাদন করাই তাদের লক্ষ্য। 

Share This Article