‘পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে’

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৮, শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২, ২০ কার্তিক ১৪২৯

শাজাহান খান। শ্রমিক নেতা। সাবেক মন্ত্রী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে যে পরিবহন ধর্মঘট চলছে সে প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ হচ্ছে স্বীকার করলেও সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

এই ধর্মঘট করা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে। যে কোনো মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই পারেন। এটি হচ্ছে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্মঘটে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে সরকারের অবশ্যই অনুশোচনা আছে

জাগো নিউজ: যেখানেই বিএনপির সমাবেশ, সেখানেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে। বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আপনি। বিএনপির সমাবেশকেন্দ্রিক এই ধর্মঘট নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

শাজাহান খান: এটিকে আমি আসলে ধর্মঘট মনে করি না। দেশে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি যেভাবে মানুষ পিটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আতঙ্ক এখনো বিরাজমান পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে। বিএনপি একটি আতঙ্কের নাম। এ কারণেই আমার কাছে মনে হয়েছে পরিবহন মালিকরা বিএনপির সমাবেশের দিন গাড়ি চালাতে ভয় পান। মালিকরা জান-মালের নিরপাত্তার জন্যই গাড়ি বন্ধ করে দিচ্ছেন।

জাগো নিউজ: আপনি বলছেন, নিরাপত্তার কারণে আর শ্রমিক-মালিকরা বলছেন, মহাসড়কে নসিমন-করিমন বন্ধের দাবিতে…

শাজাহান খান: মহাসড়কে নসিমন-করিমন বন্ধের দাবিও এখানে যুক্ত আছে। এই দাবি নিয়ে তারা সারাদেশে কর্মসূচি দিয়ে আসছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে।

বিএনপি একটি আতঙ্কের নাম। এ কারণেই আমার কাছে মনে হয়েছে পরিবহন মালিকরা বিএনপির সমাবেশের দিন গাড়ি চালাতে ভয় পান। মালিকরা জান-মালের নিরাপত্তার জন্যই গাড়ি বন্ধ করে দিচ্ছেন

জাগো নিউজ: বিএনপির এখনকার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। হরতাল-অবরোধও নেই। কেন ভয় পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে?

শাজাহান খান: বিগত দিনে বিএনপির যে ইতিহাস, তা থেকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১২-২০১৩ সালের দিকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল ডেকে শত শত গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তিন হাজার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই ক্ষতিপূরণ তো বিএনপি দেয়নি। ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শতকোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে মালিক-শ্রমিকদের।

ওই সময়ের পরিস্থিতি সরকার কীভাবে মোকাবিলা করেছে, তা সবারই জানা। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাধারণ কর্মজীবী মানুষের রক্তকে সিঁড়ি করতে চায়। এটি তো হতে পারে না। আমরা এটি করতে দিতে পারি না।

জাগো নিউজ: সরকার এখন অধিক শক্তিশালী বলছেন আপনারা। বিএনপির অরাজকতা থেকে মানুষের বা পরিবহনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো অনুশোচনা আছে কি না?

জনদুর্ভোগ হলে সরকার ইমেজ সংকটে পড়বেই। যে কোনো সরকারের সময়ই ইমেজ সংকট দেখা দেয়। এ ব্যাপারে আমি দ্বিমত পোষণ করবো না

শাজাহান খান: ধর্মঘটে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে সরকারের অনুশোচনা আছে। অনুশোচনা থাকবে না কেন?

কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকার ধর্মঘট করছে না। এই ধর্মঘট করা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে। যে কোনো মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই পারে। এটি হচ্ছে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্মঘটে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে সরকারের অবশ্যই অনুশোচনা আছে।

জাগো নিউজ: বিএনপি যদি এভাবে সমাবেশ ডাকতেই থাকে আর পরিবহন ধর্মঘট চলতেই থাকে সরকারের অবস্থান বা করণীয় কী?

শাজাহান খান: আমরা সবাইকে আহ্বান জানাবো, যাতে জনগণ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়। সরকার আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ বের করবে।

জাগো নিউজ: সমাবেশের দিন পরিবহন বন্ধ আর সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জনগণ কীভাবে দেখছে বলে মনে করেন?

শাজাহান খান: মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। জনদুর্ভোগের এই চিত্র অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা অস্বীকার করছিও না।

নির্বাচন এলেই এমন কর্মকাণ্ড ঘটে আসছে। এমন দুর্ভোগ বিএনপির সময়ও হয়েছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমরা এমন সমাবেশ ডাকলে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হতো। বিএনপি যে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করেছে তা নয়। ১৯৯২ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ১১ দফা আন্দোলন করা হলে ওই সময়ের সরকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করলে একটি কমিটি করে দেওয়া হয় এবং সমাধান হয়। সুতরাং, সরকার সব সময় সক্রিয় হবে এমনটি নয়।

জাগো নিউজ: তার মানে বিএনপির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার জনদুর্ভোগ দূর করতে নিষ্ক্রিয় রয়েছে এখন?

শাজাহান খান: আমরা সক্রিয় রয়েছি।

জাগো নিউজ: পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারে সরকার কী ভূমিকা নিয়েছে?

শাজাহান খান: সরকার ব্যবস্থা নেবে। পরিবহনমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে নিশ্চয় কথা বলেছেন, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়।

জাগো নিউজ: মালিক-শ্রমিক দাবি করছেন অদৃশ্য চাপের কারণে গাড়ি বের করতে পারছেন না। আবার বিএনপির হরতালের সময় একই চাপের কারণেই গাড়ি চালাতে হয়। নইলে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে!

শাজাহান খান: বিএনপি কী আমাদের সময় এমন আচরণ করেনি? আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশের দিনেও সারাদেশে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার।

জাগো নিউজ: একই কাজ আওয়ামী লীগও করছে!

শাজাহান খান: এই সংস্কৃতি বিএনপির। এই কালচার আমাদের নয়। এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা দরকার।

জাগো নিউজ: পরিবহন বন্ধ থাকলেও বিএনপির সমাবেশে মানুষ যাচ্ছে দু-তিনদিন আগে থেকেই। আবার জনগণও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এতে সরকারের ইমেজ সংকট বাড়ছে কি না?

শাজাহান খান: জনদুর্ভোগ হলে সরকার ইমেজ সংকটে পড়বেই। যে কোনো সরকারের সময়ই ইমেজ সংকট দেখা দেয়। এ ব্যাপারে আমি দ্বিমত পোষণ করবো না।

জাগো নিউজ: এমন ধর্মঘটে রাজনৈতিকভাবে লাভ হচ্ছে কার?

শাজাহান খান: লাভ-লোকসানের পরিমাপক যন্ত্র আমার হাতে নেই। সময়ই বলে দেবে কার লাভ হলো কার লোকসান হলো।

Share This Article