শিশুর টনসিল সমস্যা প্রতিকারে করণীয়

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫৮, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২, ৫ কার্তিক ১৪২৯

ডা. ইসমাইল আজহারি

টনসিল হচ্ছে মূলত মুখগহ্বরের ভেতরে গলার একদম উপরিভাগের কিছু মাংসপিণ্ড, যা লিম্ফ টিস্যু দিয়ে গঠিত। এটির চারটি ভাগ থাকে। জিহ্বার পেছনের দিকে থাকে লিংগুয়াল টনসিল, গলার দুপাশে প্যালাটাইন টনসিল, নাসারন্ধ্রের পেছনে ন্যাসোফ্যারিংক্সের মধ্যে অ্যাডেনয়েড টনসিল (ন্যাসোফ্যারেঞ্জিয়াল টনসিল) আর তার কাছাকাছি থাকে টিউবাল টনসিল।

 

টনসিল গ্রন্থিগুলো অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। টনসিলাইটিস বলতে সাধারণত প্যালাটাইন টনসিল তথা যে দুটো টনসিল গলার উপরিভাগের দুপাশে বিস্তৃত, তার মধ্যে কোনো প্রদাহ হলে তাকে টনসিল রোগ বা টনসিলাইটিস বলে। রোগটি সাধারণত সব বয়সেই হয়। তবে ৫ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোরের বেশি হওয়ার প্রবণতা থাকে।

কারণ : সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দিয়ে টনসিলাইটিস হয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কেউ যদি রেস্পাইরেটরি ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার টনসিল আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আবার অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানীয় পান করলেও মুখগহ্বরের অভ্যন্তরীণ অবস্থিত উপকারী অনুজীবগুলো টনসিলের মধ্যে কোলোনাইজেশন হয়ে ইনফেকশন হতে পারে।

যাদের ইমিউনিটি দুর্বল, তাদের যে কোনো সর্দি-জ্বর বা সর্দি-কাশির পর অথবা যে কোনো রেস্পাইরেটরি ভাইরাস ইনফেকশন হওয়ার পর সেকেন্ডারি ইনফেকশন হিসেবে টনসিলাইটিস হতে পারে। শীতকালে সিজনাল ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য সিজনাল ভাইরাল ইনফেকশনের পরিমাণ বেড়ে গেলে টনসিল ইনফেকশনের পরিমাণও বেড়ে যায়।

টনসিলাইটিসের উপসর্গ : মুখগহ্বরের পেছনে গলার উপরিভাগের দুপাশে লাল হয়ে ফুলে যাবে। টনসিলের আশপাশে সাদা বা হলুদ র‌্যাশ দেখা দেবে। গলাব্যথা, ইনফেকশনে জ্বর আসবে। খাবার গলাধঃকরণ করতে ব্যথা হবে। কাঁধের আশপাশে লিম্পনোডগুলো ফুলে যাবে। মাথাব্যথা, স্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ বের হবে। যাদের পরপর টনসিল ইনফেকশন হয়, তাদের ক্ষেত্রে খাবারের রুচি কমে যায়। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় এবং রাতে নাক ডাকা শুরু হয়। শিশুদের টনসিলাইটিস হলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। মুখ দিয়ে লালা বের হয়। খাবার খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। খাবার খাওয়াতে চাইলে কান্না বেড়ে যায়।

প্রতিকারে করণীয় : টনসিল প্রতিকারে ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা উচিত। ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ানো, ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া, এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে তা দিয়ে ৭ থেকে ১০বার গার্গল করে কুলি করা, নিয়মিত মধু ও কালোজিরার তেল খাওয়া ভালো।

চিকিৎসা : ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ট্যাবলেট এবং ইনফেকশনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা লাগতে পারে। সঙ্গে মুখের ভেতরে যাতে ইনফেকশন না ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য ওরাল হাইজিন মেইনটেইন করতে পভিডন মাউথওয়াশ গরম পানির সঙ্গে ২-৩ চামচ করে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পরপর গার্গল করে কুলি করা যেতে পারে।

অপারেশন লাগতে পারে তখনই : যদি বছরে ৭ বারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয় অথবা যদি পরপর ৩ বছরে ৩ বারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয়, যদি টনসিলের আশপাশে অ্যাবসেস বা পুঁজ হয়ে যায়, যদি মুখের ওষুধে সুস্থ না হয়, লাগাতার গলাব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এবং সবসময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে। অপারেশন করা হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে। ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগে। অপারেশনের পরও ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ

চেম্বার : ফরাজী হাসপাতাল, নতুন বাজার শাখা, বারিধারা, ঢাকা। ০১৬৪০৮০৮৫৪৯

বিষয়ঃ গবেষণা

Share This Article