‘নগ্নতা নয়, প্রচার করছি পছন্দের স্বাধীনতাকে’, ইরানি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:৩১, বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২, ২৭ আশ্বিন ১৪২৯

ইলনাজ লিখেছেন, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা প্রত্যেকটি নারীর নিজের চাহিদামতো পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত; তা সে যখন যেখানেই থাকুক না কেন। কোনো পুরুষ বা অন্যকোনো নারীর এই অধিকার নেই যে, তাকে বিচার করবে

হিজাব ঠিকমতো না পরায় মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় পুরো ইরানজুড়ে বিপ্লবের দাবানল জ্বলে উঠেছে। দেশটিতে ধর্মীয় অনুশাসনের নামে নারীদের ওপর চলা সমস্ত সহিংসতা বন্ধে একই কাতারে দাঁড়িয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু হয়। এরপর ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ১৯ শিশুসহ অন্তত ১৮৫ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পাশাপাশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সহস্রাধিক।

এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও অনেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এবার তাতে সামিল হলেন ইরানি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী ইলনাজ নরৌজি। তার স্পষ্ট বক্তব্য, বোরকা-হিজাব পরা যেমন একজন নারীর ইচ্ছে, তেমনি অন্য যেকোনো পোশাক পরাও তার ইচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবাদস্বরূপ একটি সাহসী ভিডিও শেয়ার করেছেন ইলনাজ। যেখানে তিনি বোরকা পরিহিত অবস্থা থেকে ধাপও  ধাপে নগ্ন হয়ে যান। প্রতিটি ধাপকেই তিনি অভিহিত করেছেন “নারীর স্বাধীনতা বা পছন্দ” হিসেবে। 

এই ফাঁকে বলা প্রয়োজন, ইলনাজ নরৌজির জন্ম ইরানের তেহরানে। তিনি জার্মানিরও নাগরিকত্ব ধারণ করেন। তবে বিনোদন জগতের মানুষ হিসেবে তিনি ভারতে পরিচিত। কেননা এখানে তিনি “স্যাক্রেড গেমস” ও “অভয়”র মতো জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ এবং “হ্যালো চার্লি”, “রাষ্ট্রকবচ ওম” ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

ইরানের পোশাক বিপ্লবের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওর সঙ্গে ইলনাজ লিখেছেন, “পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা প্রত্যেকটি নারীর নিজের চাহিদামতো পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত; তা সে যখন যেখানেই থাকুক না কেন। কোনো পুরুষ বা অন্যকোনো নারীর এই অধিকার নেই যে, তাকে বিচার করবে কিংবা অন্যভাবে পোশাক পরতে বাধ্য করবে।”

“স্যাক্রেড গেমস”- খ্যাত এই অভিনেত্রীর মতে, “প্রত্যেকের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস আছে এবং তাদেরকে সম্মান করতে হবে। গণতন্ত্র মানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, নিজের শরীরের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রত্যেক নারীর থাকা উচিত।”

সবশেষে ইলনাজ বলেন, “আমি নগ্নতার প্রচার করছি না, আমি প্রচার করছি পছন্দের স্বাধীনতাকে।”

ইলনাজের এই সাহসী প্রতিবাদে সমর্থন দিচ্ছেন তার হাজারো অনুসারী। মাত্র একদিনে তার পোস্টটিতে লক্ষাধিক রিঅ্যাকশন পড়েছে। মন্তব্যের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ হাজার। যদিও বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ইলনাজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গিয়ে সেই ভিডিওটি আর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের পর থেকেই ইরানের নারীদের ওপর পোশাকের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই নিয়ম অনুসারে বোরকার পাশাপাশি হিজাব দিয়ে নারীদের চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। তবে মাহসা আমিনির কিছু চুল বাইরে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে তার নির্মম মৃত্যু ঘটে। নারীদের পোশাক পর্যবেক্ষণের জন্য ২০০৫ সাল থেকে “নীতি পুলিশ” নামে পুলিশের একটি বিশেষ শাখা নিয়োজিত রয়েছে দেশটিতে।

বিষয়ঃ তারকা

Share This Article