দুপুরে খাওয়ার পর যে কারনে ক্লান্তি আর ঘুম আসে

  অনলাইন ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:০৪, শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২, ১৬ আশ্বিন ১৪২৯

দুপুরের খাবার খাওয়ার পর চোখ দুট রিমঝিম করতে শুরু করে। দুপুরের খাবারের পর ঘুম আসাটা বেশ সাধারণ বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। একে অনেক সময় 'ভাত ঘুম'-ও  বলে থাকেন। সাধারণত দুপুর ২টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত এই ভাত ঘুমের সময়। এই সময় চোখ ঢুলুঢুলু করে, কোনো কাজে একনাগাড়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে এর পেছনে অসংখ্য কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে রাতে ঘুম কম হওয়া বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, রক্তস্বল্পতা এবং থাইরয়েডের মতো সমস্যা। আর তাই ক্লান্ত বোধ করলে সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখতে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

যদি এমন হয় যে আপনি কাজ করার মতো শক্তি পাচ্ছেন না, তাহলে এটা সম্ভবত আপনার সারকাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির সমন্বয় না হওয়ার সমস্যা। আমাদের বায়োলজিকাল ঘড়ি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। মানুষ এটাকে স্রেফ ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার রুটিন হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন আহার এবং কার্যক্রমও জড়িত।

ফলের মাছি, ইঁদুর ও মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে আমাদের টিস্যু কোষের ঘড়ি বা সময় নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের জিন। ত্বক, লিভার এমনকি মস্তিষ্কের কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখে আমাদের এই দেহঘড়ি।

গবেষণায় দেখা গেছে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটি সময় আমাদের সজাগ অবস্থা সবচেয়ে কম থাকে। এর একটি হলো রাত ২টা থেকে সকাল ৭টা এবং অপরটি দুপুর ২টা থেকে বেলা ৫টা। অধিকাংশ মানুষই রাতের প্রহরে ঘুমিয়ে থাকেন। 

সাধারণত দুপুরের খাবারের পর পরিপাকতন্ত্রের আশেপাশে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর অর্থ মস্তিষ্ক বা এর আশেপাশে রক্ত চলাচল কমে। আর সে কারণেও ক্লান্তি আসতে পারে। এছাড়া এসময় অসংখ্য হরমোন, মলিকিউল ও নিউরোট্রান্সমিটারও ব্যস্ত থাকে। এর মধ্যে একটি হলো ওরেক্সিন। এই নিউরোপেপটাইড ক্ষুধাভাব জাগাতে এবং মানুষকে জাগিয়ে রাখতে কাজ করে। দুপুরের খাবারের পর যখন গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় তখন সম্ভবত ওরেক্সিনের কার্যক্রম কমে যায়।

একই জিনিস ট্রিপটোফ্যানের ক্ষেত্রেও ঘটে। এটা এক ধরনের অ্যামিনো এসিড যা মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয়। মেলাটোনিন এমন এক ধরনের হরমোন যা মানুষকে জাগ্রত রাখতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ-গ্লাইসেমিক শ্রেণির খাবার যেমন আলু, সাদা রুটি এবং সাদা ভাতের সাথে ট্রিপটোফ্যান যুক্ত হয়ে ইনসুলিন বেড়ে ঘুম ঘুম লাগতে পারে। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে ভাজাপোড়া, স্যাচুরেটেড প্রাণীজ চর্বি এবং উচ্চ-ক্যালোরি খাবারের সঙ্গে ক্লান্ত বোধ করার সম্পর্ক রয়েছে।

তবে এই পর্যন্ত আমরা যা জেনেছি তা মানলে দুপুরের খাবারে উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ শাক-সবজি খাওয়া ভালো যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এসব বড় আকারের প্রাণীজ প্রোটিন বা ফ্যাট খাওয়াও পরিহার করা উচিত। এছাড়া হোল গ্রেইন এবং লেগিউম জাতীয় জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উচিত। চিনিবহুল পানীয়, পাস্তা এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

Share This Article