জন্মগত চোখের সমস্যায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: দ্বীন মোহাম্মদের পরামর্শ

  অনলাইন ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫১, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮ আশ্বিন ১৪২৯

একটি শিশু নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। এর মধ্যে চোখের সমস্যাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ  একটি সমস্যা। কারণ আজকের শিশু আমাদের দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর তাই একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সাথে সমান গুরুত্বপূর্ণ চোখের সুস্থতাও। দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয় এবং এই নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই শিশুদের চোখের এই সমস্যা নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা হয় দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের কর্ণধার  ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: দ্বীন মোহাম্মদের সাথে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: দ্বীন মোহাম্মদ বাংলা ইনসাইডারের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, একটি শিশু জন্মের সময় নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। আর নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে চোখের সমস্যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর চোখের এ সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে জন্মগতভাবে ট্যারা চোখ, বাঁকা চোখ, জন্মগত ছানি, জন্মগত নেত্রনালী বন্ধ বা চোখ দিয়ে পানি পড়া, পুঁজ বের হওয়া, চোখ ফুলা ইত্যাদি। জন্মগত এসকল সমস্যার চিকিৎসা যদি সাথে সাথে করানো না হয় তাহলে শিশুদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে ক্রমান্বয়ে শিশুর যত বয়স বাড়তে থাকে চোখের এ সমস্যা গুলো আরও বড় আকার ধারণ করবে।

চোখের এ সমস্যাগুলো নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ  ডা: দ্বীন মোহাম্মদের পরামর্শ-

ট্যারা চোখ: জন্মগতভাবে শিশুরা ট্যারা হয়ে জন্মাতে পারে। তখন অবহেলা না করে একজন চিকিৎসক বা চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে যত তাড়াতাড়ি  সম্ভব চোখের চিকিৎসা করা উচিৎ। কারণ জন্মের পর সাথে সাথে যদি এই সমস্যা চিকিৎসা করা না হয় তাহলে দুই চোখের ভিশন ঠিক থাকে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে তাদের দেখতে সমস্যা হয়।

বাঁকা চোখ: জন্মগতভাবে আবার চোখ বাঁকাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিশু ছোট থাকা অবস্থাতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোখের চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করানো উচিৎ। বিশেষ করে শিশু জন্মের ৪-৫ বছরের মধ্যে চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যাবে। তবে দেরি হলে এ সমস্যা আরও বাড়বে এবং দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। ফলে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি আর সমান হবে না।

ডাক্তারের পরামর্শে চোখ পরীক্ষা করে চশমা ব্যবহার করে, বিভিন্ন রকম চোখের ব্যায়াম এর মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব।

দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি একত্রিত হয়ে একটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে যায়। ফলে আমরা পরিপূর্ণ দেখতে পারি । একচোখ বন্ধ করে যদি আমরা দেখা চেষ্টা করি তাহলেই পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝা যাবে। দেখা যাবে আমরা একটা পাশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আরেকটা পাশ থেকে অল্প। তাই সুন্দর জীবনযাপনের জন্য দুই চোখের সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জন্মগত চোখের ছানি: শিশুরা জন্মগত ছানি নিয়ে জন্মাতে পারে। ছানি রোগের লক্ষণ হলো জন্মের পরে বা কিছুদিন পর চোখের একপাশ বা উভয় পাশেই সাদা আস্তরণ দেখা যায়। আর এটাকে বলে জন্মগত ছানি। জন্মগত ছানিটা পড়ে আসলে শিশু জন্মের সময় চোখে আঘাত, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।

নেত্রনালী বন্ধ বা পানি পড়া: জন্মগতভাবেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এর কারণ চোখের নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তবে ১-২ বছরের মধ্যে চোখের বন্ধনালী খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও চোখের এলার্জি অথবা জন্মগত চোখের চাপ বাড়ার কারণেও শিশুদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। প্রয়োজনে পরবর্তীতে অপারেশনের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়।

এই সমস্যা গুলি যদি জন্মের পর সাথে সাথে নিশ্চিত করা না যায় এবং চিকিৎসা করা না হয় তাহলে চোখের এ সমস্যাগুলি একটা সময় অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সবসময় সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও এ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

Share This Article