অভিশপ্ত এই হিরে, বহু মানুষকে খেয়েছে!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১৬, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪ আশ্বিন ১৪২৯

অনলাইন ডেস্ক : বহু মূল্যবান রত্নের মধ্যে রয়েছে হিরে। হিরে অনেক রকম, তার মধ্যে দামি হিরে গুলি নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। অতীতে হিরেকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র নেতাদের মধ্যে বেঁধে যেত স্নায়ু যুদ্ধ । 

আজকের এই প্রতিবেদনে এমন এক হিরের কথা জানবেন যাকে বলা হয় অভিশপ্ত হিরে, যে একের পর এক খেয়েছে জীবন্ত তরতাজা প্রাণ।হিরে হল পৃথিবীর একটি আশ্চর্য বস্তু। পৃথিবীর অন্ধকার গর্ভে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটি হিরের কেলাস তৈরি হয়। মূল্যবান হিরে গুলির মধ্যে অন্যতম হল হোপ ডায়মন্ড, যাকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান রহস্য। পাশাপাশি এর গায়ে লেগে রয়েছে যুগের পর যুগের টিকে থাকা এক অভিশাপ। জানা যায়, এই হোপ ডায়মন্ডের কারণে পৃথিবীতে বহু খুনোখুনি হয়েছে। একে ঘিরেই রয়েছে অভিশাপের গল্প।

পুরোহিতের অভিশাপ

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, হিরে কিংবা কোন রত্ন মানুষের জন্য উন্নতি আর সাফল্য বয়ে আনে। কিন্তু এই হিরে শুধু সাফল্য আর উন্নতি নয় ডেকে এনেছিল বিপদ, ষড়যন্ত্র আর মৃত্যু। এই হিরেটি নাকি পাওয়া গিয়েছিল ভারতবর্ষের গোলকুন্ডার কোল্লুর খনি থেকে। জানা যায়, এই হিরেটি ফরাসি পর্যটক ও রত্ন ব্যবসায়ী জাঁ ব্যাপটিস্ট ট্যাভেনিয়ার সবার প্রথমে পশ্চিমাদের সামনে আনেন। তিনি নাকি কোন এক মন্দিরের মূর্তির চোখ থেকে হিরেটি সরিয়েছিলেন। আর সেই মন্দিরের পুরোহিতের দেওয়া অভিশাপ বয়ে বেরিয়েছে এই হিরে। যদিও এখনো পর্যন্ত এর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যখন হিরেটি ট্যাভেনিয়ার নিয়েছিলেন তখন এর ওজন ছিল প্রায় ১১২ ক্যারেট। তিনি হিরেটি বিক্রি করে দেন সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের কাছে। তখন হিরেটি পরিচিতি পায় ফ্রেঞ্চ ব্লু নামে।

হিরের কারণে ভয়ঙ্কর মৃত্যুর খেলা!

প্রচলিত আছে ট্যাভেনিয়ার নাকি বৃদ্ধ বয়সে কুকুরের আক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। সর্বনাশের খেলা শুরু হয় রাজা ষোড়শ লুইয়ের সময় থেকে। শোনা যায় রাজা তাঁর গোপন প্রেমিকাকে এই হিরেটি উপহার দেন। কিন্তু সেই প্রেমিকা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত থাকায় হিরেটি রাজপ্রাসাদে ফিরে আসে। রাজপুরুষ নিকোলাস মাত্র একবারের জন্য একটি পার্টিতে হিরেটি পরেছিলেন। তারপরেই তিনি রাজ রোষের শিকার হন। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তিনি জেলে ছিলেন প্রায় ১৫ বছর। ফরাসি বিপ্লবের সময় ষোড়শ লুই এবং তাঁর স্ত্রী প্রাণ হারান গিলোটিনে।

গুজব নাকি সত্যি অভিশপ্ত?

উনিশ শতকে শুরুর দিকে এই হিরেটিকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল ব্রিটেনে। এটি কিনেছিলেন রাজা চতুর্থ জর্জ। তাঁর মৃত্যুর পর প্রচুর দেনা শোধ করতে হোপ ডায়মন্ড বিক্রি করে দেওয়া হয়, যা কিনে নেন উইলিয়াম ফিলিপ হোক নামে একজন ব্রিটিশ ব্যাঙ্কার। তখন হিরেটির ওজন হয়ে যায় ৪৬ ক্যারাট। এইভাবে একের পর এক নানান ব্যক্তির হাত ঘুরে হিরেটি অবশেষে আসে আমেরিকার রত্ন ব্যবসায়ী পিয়েরে কার্তিয়ের কাছে। কিন্তু ততদিনে বাজারের লোকমুখে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে এই হিরেটি নাকি অভিশপ্ত। তাই আমেরিকার অনেকেই এই হিরেটি সম্পর্কে আগ্রহ দেখালেও কেউ কেনেননি, শুধুমাত্র পিয়েরে ছাড়া। গবেষকদের অনেকেই মনে করেন হিরেটির বাজার দর বাড়ানোর জন্যই তিনি নাকি এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে ছিলেন।

এই অভিশপ্ত হিরেকে কেন্দ্র করে রয়েছে ইভালিনে ওয়ালেস ম্যাকলিনের কাহিনী। ১৯১২ সালে তিনি হিরেটি কিনেছিলেন। তারপর ইভালিনের ছেলে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান এবং মেয়ে আত্মহত্যা করেন। তথাকথিত অভিশাপের ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থা ছিল হয়েছিল ইভালিনের। পরবর্তীকালে এই হিরেটি দান করে দেওয়া হয়েছিল ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিকে। এখনো পর্যন্ত এই মিউজিয়ামের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু জানা যায় যে পোস্টম্যান হিরেটি মিউজিয়ামে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি ট্রাকের ধাক্কায় আহত হয়েছিলেন। তার কিছুদিন পরেই তার স্ত্রী এবং পোষা কুকুর মারা যায়। আরো কিছুদিন পর তার বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে ।

Share This Article