মাঝ সমুদ্রে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মুখে মিথিলা, কী ঘটল ভাগ্যে?

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৩৮, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৯

এটা হয়তো অনেকেরই জানা যে, অভিনয়ের পাশাপাশি রাফিয়াত রশীদ মিথিলা একজন সমাজকর্মী। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপম্যান্ট বিভাগের প্রধান তিনি। এই কাজেই অভিনেত্রীকে সারা বছরই ছুটে বেড়াতে হয় এদেশ থেকে ওদেশ। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গিয়েছিলেন উগান্ডায়।

সেখানে বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষে পৌঁছান পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে। উদ্দেশ্য সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা। সেই কর্মশালা ভালোভাবেই মেটে। তবে বিপদে পড়েন ফেরার পথে।

 

দ্বিতীয় স্বামী সৃজিত মুখার্জীর বাড়ি কলকাতায় ফেরার জন্য বিমান ধরবেন মিথিলা। তখনই বিপত্তি। শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের ভৌগলিক অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। ঝড়ের মুখে কীভাবে বিপদে পড়তে হয়েছিল তাকে সেই অভিজ্ঞতাই শেয়ার করেছেন ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে।

অভিনেত্রী জানিয়েছেন, যারা সাধারণত তার অফিসিয়াল ট্যুরের সুন্দর ছবি দেখে ‘আহা, উহু’ করেন- এই পোস্ট আসলে তাদের উদ্দেশ্যেই। সুন্দর ছবির পেছনে আসল অভিজ্ঞতাটা তিনি শেয়ার করছেন। সোমবার দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার কর্মশালা গতকাল (রবিবার) শেষ হয় এবং গতকাল রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কলকাতায় যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর একদিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করে না বাইরে।’

‘তো যাই হোক, কালকে বিকাল বেলা থেকেই প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানি, ফ্রি টাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে এবং সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্টটা ফ্রি টাউন থেকে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় অবস্থিত, যার নাম ‘লুংগি’। ফ্রি টাউন থেকে এক ঘণ্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়।’

‘ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে৷ আমার ফেরি, যেটাকে ‘সি কোচ’ বলা হয়, সেটার টাইম ছিল রাত ২টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে আবহাওয়া রাতে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারণ করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় সি কোচ টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫.৩০টায় সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লানকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরার কথা। যাহোক তার আগে তো সমুদ্রটা পাড়ি দিতে হবে।’

মিথিলার শেয়ার করা এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা পড়ে যে কারো হয়ত সিনেমার মতোই মনে হবে। যদিও ঘটনাটা কঠিন বাস্তব। মিথিলা লিখেছেন, ‘রাত ২টায় যখন সি কোচে উঠে বসলাম তখন বোট ভিষণভাবে দুলছিল। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সাথে সাথে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করল। বিশাল বিশাল পানির ঝাপটা আসছিল। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না!’

‘শেষ পর্যন্ত এক ঘণ্টাকে এক জীবন ভাবার আগ মুহুর্তে ফেরি ওপাড়ে পৌঁছালো। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল অব্দি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাসে চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজলো ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেনে উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম। কারণ বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেনে উঠার সময় অবশ্যই কোনো ছাতার ব্যবস্থা ছিল না।’

‘যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছি সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল! আমার ফ্লাইটটা ছিল ‘এয়ার মারোক’, যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানী ‘মনরোভিয়া’ হয়ে কাসাব্লানকা যাবে। এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে, একটা প্লেন লোকাল বাসের মত মাঝখানে দু-একটা জায়গায় থেমে যাত্রি তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রীদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবে না। প্লেনেই বসে থাকবে।’

‘তো মনরোভিয়াতে ঘণ্টাখানেক থামাসহ সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টার মত জার্নি করে দুপুর ২টায় কাসাব্লাংকায় পৌঁছানোর পর আরেক বিপদ হলো। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাইয়ের ফ্লাইটটা আমি মিস করলাম। এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন, এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোনো হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবে না (অন আরাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবে না)।’

‘তো আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করালাম, যেটা বিকালে ছাড়বে কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১টায় ইস্তানবুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তানবুল থেকে ঢাকায় যাবার ফ্লাইটটাও সাড়ে ৫ ঘন্টা ডিলেইড!’

ঘুম চোখে ইস্তানবুল বিমানবন্দরে বসে পুরো ঘটনা শেয়ার করেন মিথিলা। লেখেন, ‘আপাতত আমি ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই রচনাটি লিখছি। আচ্ছা এর মধ্যে আমার লাগেজটা যে কোন ফ্লাইটে কোথায় চলে গেছে সেটা কিন্তু আমি এখনো জানি না, জানার চেষ্টা করারও শক্তি নেই। এই গল্পটা তাদের জন্য লিখলাম যারা শুধু সুন্দর ছবিগুলোই দেখে, তার পেছনের কঠিন সময়ের গল্পগুলো জানে না।’

‘এই যে গত তিন সপ্তাহ ধরে মেয়েকে বাড়িতে রেখে, হাজার হাজার মাইল বিভিন্ন দেশে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে জার্নি করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করা, সেটা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে; আমোদ ফূর্তির জন্য না। সবসময় সুন্দর ছবি আর ভালো কথাগুলো শেয়ার করি কারণ, আমি যা কিছু ভালো, আর পজিটিভ সেটাই ভাগ করে নিতে চাই। একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী হিসেবে আমার কাজ এবং বিভিন্ন দেশে ব্র্যাক-এর কন্ট্রিবিউশন নিয়ে আমি ভীষণ গর্ববোধ করি।’

‘তাই পেছনের কঠিন সময়গুলোকেও অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখি। যাইহোক, আরও কম হলেও ১২ ঘণ্টার মত জার্নি বাকি আছে। সবমিলিয়ে কত ঘণ্টা হলো সেটা হিসাব করার মানসিক অবস্থা আপাতত নাই। আমি দোয়া প্রার্থী।’

শুধু লম্বা পোস্টই নয়, সঙ্গে সেখানকার বেশ কয়েক টুকরো ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী মিথিলা। সেই পোস্টের নিচে অনেকেই তার সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করেছেন।

বিষয়ঃ তারকা

Share This Article


যে কারণে সিনেমা থেকে দূরে আছেন ববিতা

চয়নিকা-বুবলীকে নিয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য পরীমনির

নুসরাতকে খোঁচা দিয়ে মিমির প্রশংসায় পঞ্চমুখ অঙ্কুশ

মাহির ছেলের জন্মদিনে পরীমনির শুভেচ্ছা

ভোটার তালিকায় নাম নেই অনেকের, ব্যক্তি আক্রোশ না অন্য কিছু?

১৯ এপ্রিলই হবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন

শাকিবের ‘রাজকুমার’-এর ফার্স্ট লুক প্রকাশ

শাকিবের জন্মদিনে বুর্জ খলিফায় ‘রাজকুমার’ প্রচারে খরচ কত কোটি

বুর্জ খলিফাতে শাকিবের ঈদের ছবির ট্রেলার!

বুবলী-পরীমনির দ্বন্দ্বের মাঝে অপু বিশ্বাসের রহস্যময় স্ট্যাটাস

পদত্যাগ করলেন আয়ারল্যান্ডের প্রথম সমকামী প্রধানমন্ত্রী

প্যানেল সঙ্গীদের হারিয়ে ধুঁকছেন নিপুণ