৩৪ বছর পর ‘চরমপন্থি’ নেতা সাইফুল গ্রেপ্তার

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৩০, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৯

১৯৮৭ সালে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় হামলা করে পুলিশ সদস্য হত্যা এবং থানার মজুত করা অস্ত্র লুটের ঘটনায় হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চরমপন্থি সংগঠনের নেতা সাইফুল ইসলাম ওর‌ফে মানিককে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

শ‌নিবার দুপু‌রে কারওয়ান বাজা‌রে র‌্যাব মি‌ডিয়া সেন্টা‌রে আ‌য়ো‌জিত সংবাদ স‌ম্মেল‌নে র‍্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৮৭ সালে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় হামলা করে পুলিশ সদস্য হত্যা এবং থানার মজুতকৃত অস্ত্র লুটের ঘটনায় হত্যাসহ ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল। গত ৩৪ বছর ধ‌রে ছদ্ম‌বে‌শে পলাতক ছিলেন চরমপন্থি এ নেতা।

 

গ্রেপ্তার সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে জানি‌য়ে‌ছেন, তি‌নি ১৯৮৪ সালে চরমপন্থী নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি লাল পতাকা ওর‌ফে সর্বহারা দলে যোগ দেন। চরমপন্থী নেতা তারেক প্রতি সপ্তাহে চাটমোহর এলাকায় উঠতি বয়সের যুবকদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে উঠান বৈঠক করতেন। বৈঠকে তি‌নি আকর্ষনীয় কথাবার্তা বলতেন। তি‌নি বলেন, তার দলে যোগ দিলে কোনো অভাব অনটন থাকবে না। তারা সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে। কেউ তাদের কাজে বাধা দিলে তাদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবে। যদি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে তারা পুলিশ হত্যা করে থানা ফাঁড়ি লুট করবে।

এমন আকর্ষনীয় কথায় মুগ্ধ হয়ে সাইফুল সক্রিয়ভাবে চরমপন্থীদের হত্যা, লুটপাট, ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। চরমপন্থীদের সাথে যোগ দেয়ায় এলাকায় সকলে তাকে সমীহ কর‌তো। যাদের সাথে তার বিরোধীতা ছিলো চরমপন্থীদের আশ্রয়ে থাকায় সকলে তার সাথে আপোষে মীমাংসা করে নেয়। চরমপন্থী নেতা তারেক ঘটনার দুই মাস আগে থে‌কে গুরুদাসপুর থানা লুট করার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তি‌নি ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, পাবনা, টাঙ্গাইল এলাকা থেকে চরমপন্থী দলের সদস্যদের আহবান জানিয়ে একত্রিত করেন। ঘটনার দিন তারা বিভিন্ন এলাকা হতে প্রায় ৬০ জন নাটোর, ধামাইর মাঠে জড়ো হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিত অবস্থায় পোটলার মধ্যে অস্ত্র লুকিয়ে গুরুদাসপুর থানা ও টেলিফোন অফিসের আশপাশ এবং হাট এলাকায় অবস্থান নেন।

ঘটনার এক সপ্তাহ থে‌কেই কয়েকজন সার্বক্ষনিক টেলিফোন অফিসের কর্মী এবং গুরুদাসপুর থানার ফোর্সের গতিবিধির উপর নজরদারি করছি‌লেন। তাদের সবুজ সংকেত পাওয়া মাত্রই সুলতানের নেতৃত্বে ৫ জন টেলিফোন অফিসে প্রবেশ করে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেন। অন্যদিকে তারেকের নেতৃত্বে সাইফুলসহ প্রথমে ৪ জন জিডি করার জন্য থানায় প্রবেশ করেন এবং মজিদের নেতৃত্বে ১০ জন থানা ব্যারাকে প্রবেশ করে সকল ফোর্সকে কক্ষের মধ্যে বন্দি করে রাখেন।

এ সময় ডিউটিরত কনস্টেবল হাবিবুর রহমান প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইলে তারেক গুলি করে কনস্টেবল‌কে হত্যা করেন। গুলির শব্দের সাথে সাথে থানার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন তারেক অস্ত্রাগারের তালা ভেঙ্গে অস্ত্রাগার হতে সকল অস্ত্র, গোলাবারুদ লুটপাট এবং থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী দলের আটক একজন সদস্য ইয়াকুবকে তালা ভেঙ্গে মুক্ত করেন। এরপর তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে থানা কম্পাউন্ড এবং টেলিফোন অফিস ত্যাগ করে লুন্ঠনকৃত অস্ত্র নিয়ে হাটের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে চলে যান।

হাটের মধ্যে অনেক লোক উপস্থিত থাকলেও কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস করেননি। তাছাড়াও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের দলের সদস্যরা ভিড়ের মধ্যে ছদ্মবেশে লুকিয়ে ছিলো। কেউ তাদের কাজে বাধা দিলে প্রতিহত করার পূর্ব প্রস্তুতি তাদের ছিলো। লুণ্ঠনকৃত অস্ত্র তারেক, সুলতান, মজিদ এবং ইয়াকুব তাদের হেফাজতে নিয়ে চাটমোহর, চলনবিল এলাকায় লুকিয়ে রাখে। ঘটনার শেষে ‌গ্রেপ্তার সাইফুল তার বাড়িতে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন।

১৯৮৮ সালে তারেকের নেতৃত্বে চাটমোহর থানার খোতবাড়ি এলাকায় মাঠের মধ্যে রাতে নকশালপন্থী এবং সর্বহারাদের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই ঘটনায় নকশালপন্থী ১২ জন নিহত হয়। ঘটনার পর তি‌নিসহ সর্বহারা দলের সদস্যরা চলনবিলে গোসল করে যার যার বাড়িতে চলে যায়। ভোর হলে পুলিশ ১২ জ‌নের লাশ উদ্ধার করে এবং থানায় মামলা করে। ওই মামলায় সাইফুল গ্রেপ্তার হন।

ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুদাসপুর থানার অস্ত্র লুটের সত্যতা বেরিয়ে আসে। ওই মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত হয়ে সাইফু‌লের পলাতক জীবন শুরু হয়। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তি‌নি আদালতে কোনো হাজিরা দেননি। থানা লুট ও ১২ নরহত্যা মামলাসহ তার নামে ৫ টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ১৯৮৭ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাটের দিন সকালে একদল চরমপন্থী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিত অবস্থায় হাতে পোটলা নিয়ে হাটের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পোটলার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র লুকায়িত ছিলো। তাদের মধ্যে কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয় এবং কয়েকজন থানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময়ে থানায় প্রহরারত কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে ২টি এসএমজি, ৪ টি এসএলআর, ১৮ টি ৩.৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়। তারপর তারা লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে পূর্বদিকে গারিসাপাড়া হয়ে ধামাইর মাঠের দিকে চলে যায়। উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার মামলা হয়। মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামি গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৪৯ জনকে আসামি করে গুরুদাসপুর থানার চার্জশিট নম্বর-৫৯ এবং গুরুদাসপুর চার্জশীট নম্বর-৬০ আদালতে দাখিল করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে ওই মামলার রায় ঘোষনা করা হয়।

বিষয়ঃ র‌্যাব

Share This Article


ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ রিমান্ড শেষে কারাগারে

রাজধানীতে দলনেতাসহ 'কিশোর গ্যাং'র ৩৭ সদস্য গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের রহস্যজনক মৃত্যু

জবিতে হিযবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণের সময় ঢাবি শিক্ষার্থী আটক

খাগড়াছড়িতে বাইক থামিয়ে আরোহীকে গুলি

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি হতে খরচ ত্রিশ হাজার টাকা

বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ মোহাম্মদপুরের ৩৯ কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেপ্তার

ফেসবুকে নারী সেজে প্রতারণার অভিযোগে যুবক আটক

‘দুবাইয়ের পণ্য’ তৈরি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে, বিক্রি সারাদেশে

অপহরণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হলেও গ্রেফতারে পিছপা হয়নি প্রশাসন

চায়ের দোকানে ২ ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা