পোশাক রপ্তানিতে স্থানীয় মূল্য সংযোজন কমছে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:৪১, বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২, ৯ ভাদ্র ১৪২৯

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। ফলে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হার কমেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছর এ হার ৫৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে নেমেছে। এর আগের অর্থবছরে স্থানীয় মূল্য সংযোজন ছিল ৫৯ শতাংশ। তৈরি পোশাকে মূল্য সংযোজন বলতে বোঝায় রপ্তানি মূল্য থেকে আমদানি করা কাঁচামালের মূল্য বাদ দিয়ে নিট রপ্তানিকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের মধ্যে থেকে কেনা কাঁচামাল।


 তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল তুলা। প্রায় শতভাগ তুলা আমদানি করতে হয়। গত দুই বছর ধরে তুলাসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। মূলত এ কারণেই স্থানীয় মূল্য সংযোজনের আনুপাতিক হার কমেছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারের চাহিদা বুঝে উচ্চমূল্যের কৃত্রিম আঁশের পোশাক বা ম্যানমেইড ফাইবারের পোশাক উৎপাদনে ঝুঁকছেন রপ্তানিকারকরা। এ ধরনের পোশাকের প্রায় শতভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।

পোশাক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গত দুই বছরের ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ডলারের মতো। নিট রপ্তানির পরিমাণ বাকি ২ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ, মূল্য সংযোজন হয়েছে ৫৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে কাঁচামাল আমদানি হয় ১ হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের। নিট রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার। ওই অর্থবছর মূল্য সংযোজন হয়েছে ৫৯ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছর এ হার ছিল ৫৬ শতাংশ।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এতে অন্যান্য শিল্পের মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা থেকে কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্রকলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে স্থানীয় উৎস থেকে চাহিদামতো কাঁচামালের জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, ওভেন ক্যাটাগরিতে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। এসব কারণে স্থানীয় মূল্য সংযোজন কমেছে।

বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন সমকালকে বলেন, তৈরি পোশাকের নিট উপ-খাতে বেশিরভাগ কাঁচামাল জোগান দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ওভেন খাতেও সাধারণ মানের পাশাপাশি মানসম্পন্ন সুতা কিংবা কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তাঁদের। তবে উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরিতে উপযোগী সুতা ও কাপড় উৎপাদনে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন, যা পাওয়া যাচ্ছে না।

পোশাক উৎপাদনে ব্যবহূত অ্যাক্সেসরিজের ৯০ ভাগ জোগান দেওয়া হচ্ছে স্থানীয়ভাবেই। এ খাতে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিপিএমইএর সভাপতি মোয়াজ্জাম হোসেন মতি সমকালকে বলেন, পোশাক উৎপাদনে ৩৮ রকমের অ্যাক্সেসরিজ প্রয়োজন হয়। এর শতভাগই স্থানীয়ভাবে তাঁরা সরবরাহ করতে সক্ষম। তার পরও ১০ শতাংশ অ্যাক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং আমদানি করা হয়। বিজিএমইএর সঙ্গে তাঁরা কাজ করছেন যাতে ক্রেতাদের বোঝানো সম্ভব হয়, স্থানীয়ভাবেই মানসম্পন্ন অ্যাক্সেসরিজ হচ্ছে।

Share This Article