প্রাইভেটকারে গার্ডার: রুবেলের মরদেহ নিতে মর্গে স্ত্রী দাবিদার ৪ নারী

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:৪০, মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২, ১ ভাদ্র ১৪২৯

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার ক্রেন থেকে ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে পাঁচজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়। অন্যদিকে মর্গের সামনে পরিবারের কর্তাব্যক্তি রুবেলের স্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। মর্গের সামনে চার নারী নিজেকে রুবেলের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন।

 

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) মর্গের সামনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করছেন। অনেকেই কান্নাকাটি করছেন। এসময় রুবেলের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। সেখানে আলাপকালে এক এক করে রুবেলের চারজন স্ত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়।

তাদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী রেহানার সঙ্গে বিয়ে হয় ৩০ বছর আগে। সেই ঘরের প্রথম ছেলেসন্তান হৃদয় সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরেন।

প্রথম স্ত্রী রেহানার বোনজামাই ও রুবেলের ভায়রাভাই রহমত জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শরীয়তপুরে থাকি। আমাদের রুবেল বায়িং হাউজের ব্যবসা করতেন বলে জানতাম। আমরা তেমন একটা ঢাকায় আসতাম না। মৃত্যুর খবর শুনে আসলাম। শুনেছিলাম সে দ্বিতীয় আরেকটা বিয়ে করেছেন।

রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শাহেদা। তার ঘরে রত্না নামে ১৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সিংগাইর এলাকায়। ঢাকায় উত্তরা থাকেন।

তবে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহেদা নিজেকে প্রথম স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ১৯৯৯ সালে বিয়ে হয়েছে। আমিই প্রথম। আমাকে সে কখনো বলেনি তার আরেকজন স্ত্রী আছে।

প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় রহমত বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার একটি মেয়ে হয়েছে শুনেছিলাম। সেই স্ত্রীর আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরের একটা ছেলেও আছে। ছেলেসহ রুবেলের সঙ্গে বিয়ে বসেন তিনি।

রুবেলের তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা আরেক নারীর নাম সালমা আক্তার পুতুল। মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় থাকেন তিনি। ঘরে বসে সেলাই মেশিনের কাজ করেন। ২০১৪ সালে রুবেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। রুবেলের সম্পর্কে তিনি জানতেন সে একজন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী। তবে, রুবেলের সঙ্গে বিয়ের কোনো সনদ নেই তার।

সনদ ছাড়া কীভাবে স্ত্রী দাবি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে বিয়ে করেছে মিথ্যা কথা বলে। আমি জানতাম তার স্ত্রী আছে মাত্র একজন। প্রথম ঘরের স্ত্রী অসুস্থ বলে আমাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের পর দেখি আরও অনেকের সঙ্গেই তার সম্পর্ক আছে। পাতা খন্দকার নামে তার আরেকজন স্ত্রী আছে। তার সঙ্গে কথা বললে আমাকে বলতো মামাতো বোনের সঙ্গে কথা বলছি। পরে আমি প্রতারণার মামলা করি। মামলা আমার পক্ষেও আছে। এমনটাই দাবি তার।

এরপর পাতা খন্দকার নামে আরেকজন স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। যাকে রুবেল বিয়ে করেন ২০২০ সালের দিকে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাগো নিউজকে এমনটাই জানান পাতা খন্দকারের ভাগনে। এমনকি তার খালাকে বিয়ে করার আগে ডিবি পরিচয়ে বিয়ে করেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে পাতা খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, আমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে অনেক দিন আগে। তবে কবে হয়েছে স্পষ্ট বলেননি তিনি। তিনি দাবি করেন, আমিই দ্বিতীয় স্ত্রী। বাকিরা প্রথম স্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাসায় কাজ করতেন। তখন তাদের বিয়ে করেছেন। এ বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই।

পাতা খন্দকার দাবি করেন, তিনি এ পর্যন্ত রুবেলের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। যে গাড়িটি চাপা পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে, সেটিও কেনার সময় ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন রুবেলকে। মারা যাওয়ার আগেও তার বাসায় গিয়ে ছিলেন রুবেল। তার সঙ্গে সবারই ভালো সম্পর্ক। প্রথম স্ত্রীর বাড়িতেও তিনি যাতায়াত করতেন বলে দাবি করেন তিনি।

রুবেলের চারজন স্ত্রী আছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় রহমত বলেন, এখন অনেকেই অনেক কিছু বলতে আসবে। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। আমরা তাদের চিনিও না। আমরা প্রথম ঘরের আত্মীয়। আমরা সবাই এসেছি। আমাদের ঘরের প্রথম ছেলে আছে।

এদিকে প্রথম স্ত্রীর ছেলেসন্তান বেঁচে যাওয়া হৃদয় জাগো নিউজকে বলেন, তার জন্ম ১৯৯৫ সালে। অন্যদিকে শাহেদার সঙ্গে বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে। কিন্তু শাহেদা আরেক স্ত্রী আছে জানতেন না বলেই নিজেকে প্রথম স্ত্রী দাবি করেন তিনি।

Share This Article