বাঙালির শোকের মাস শুরু

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৫৮, সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২, ১৭ শ্রাবণ ১৪২৯

‘‘...আগস্ট শোকের মাস, পাপমগ্ন, নির্মম-নিষ্ঠুর,/তাকে পাপ থেকে মুক্ত করো কান্নায়, কান্নায়।’’ আগস্ট মাস এলেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে বরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো’ কবিতার এই অংশটি। 

এই মাসেই বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্র স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ হত্যা করে। আজ সেই শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথম দিন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।

সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ছোট ছেলে নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন। ওই সময় জার্মানি থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এর পর দীর্ঘ ৬ বছর ভিন দেশে শরণার্থীর জীবন কাটাতে হয় তাদের।

১৫ আগস্টের ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এ হত্যার বিচার বন্ধ করতে ঘৃণ্য ‘ইনডেমনিটি’ অধ্যাদেশ জারি করে। সেই থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। জাতির পিতার বড় মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। নিয়মতান্ত্রিক সেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে।

আগামী ১৫ আগস্ট জাতির পিতার ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করবে শোকার্ত বাঙালি জাতি। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শোকের মাসের শুরু উপলক্ষে ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। একই সময়ে ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করে মহিলা আওয়ামী লীগ। ১ আগস্ট সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কৃষক লীগের আয়োজনে রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, আজিমপুর এতিমখানায় খাবার বিতরণ এবং বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনাসভা। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা। ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনাসভা। এ ছাড়া ২৭ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগের আলোচনাসভার মধ্য দিয়ে শোকের মাসের কর্মসূচি শেষ করবে আওয়ামী লীগ।

Share This Article