খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস কমিয়েছে আইজিসি
২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন কমে যাওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে। পূর্বাভাস সত্য হলে পাঁচ মৌসুমের মধ্যে এবারই প্রথম উৎপাদন কমবে। উৎপাদনের পাশাপাশি পুরনো মৌসুমের মজুদও কমার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের (আইজিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন আগের মৌসুমের তুলনায় ২ শতাংশ কমবে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৫ কোটি ২০ লাখ টনে। গম ও ভুট্টার নিম্নমুখী উৎপাদন এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
আইজিসির পূর্বাভাস বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে পুরনো খাদ্যশস্যের মোট মজুদ কমে আট বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে। মজুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৮ কোটি ৩০ হাজার টনে। আগের মৌসুমের তুলনায় যা ৪ শতাংশ কম।
মাসভিত্তিক গ্রেইন মার্কেট রিপোর্টে আইজিসি জানায়, নতুন মৌসুমে ভুট্টার বৈশ্বিক উৎপাদন ৩ কোটি ২০ লাখ টন কমতে পারে। অন্যদিকে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন কমবে ১ কোটি ১০ লাখ টন।
উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে আইজিসির বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় খরা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় গম, ভুট্টাসহ সব ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া লাতিন আমেরিকার দেশগুলোও এখনো খরার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এদিকে সম্প্রতি গম উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ দেশ ভারত তীব্র দাবদাহের কবলে পড়ায় ব্যাহত হয়েছে শস্যটির উৎপাদন। এ কারণে দেশটি গম রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
এদিকে উৎপাদন ও মজুদের পাশাপাশি খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার কমতে পারে বলেও জানিয়েছে আইজিসি। গত মাসে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় ব্যবহার ৩০ লাখ টন কমতে পারে। এছাড়া ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় ব্যবহার কমবে ১ কোটি ১০ লাখ টন।
আইজিসি বলছে, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটে বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী দাম। সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানিবিষয়ক একটি চুক্তি হলে লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যায় গমের দাম। এর পরও শস্যটির দাম রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে পশুখাদ্য উৎপাদনে শস্যের ব্যবহার কিছুটা কমবে। তবে খাদ্যপণ্য ও শিল্প খাতের জন্য খাদ্যশস্যের ব্যবহার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে।
এদিকে গত মাসে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় চলতি মাসে সয়াবিন উৎপাদন পূর্বাভাস কমানো হয়েছে ৪০ লাখ টন। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। তবে পূর্বাভাস কমালেও গত মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ১০ শতাংশ বেড়ে ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হবে। গত মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ১০ লাখ টন।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ মৌসুমে বৈশ্বিক চাল উৎপাদন কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫১ কোটি ৮০ লাখ টনে। তবে শস্যটির বাণিজ্য গত বছরের চেয়ে ১০ লাখ টন বাড়বে। বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ কোটি ২০ লাখ টনে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
আইজিসির খাদ্যশস্য ও তেলবীজের মূল্যসূচক (জিওআই) ১০ শতাংশ কমেছে। রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর মূল্যসূচকে এমন পতন আর দেখা যায়নি।