চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে বছরে ৩০-৪০ হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:১১, শনিবার, ১১ জুন, ২০২২, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

এস. হুমায়ুন কবির

চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে বছরে ৩০-৪০ হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা
স্থানীয় বাজারেও এই চিংড়ির প্রচুর চাহিদা আছে। ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আভ্যন্তরিন চাহিদা পূরনের জন্য এর দাম যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ঠিক তেমনই স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারেও এর রপ্তানি এখন শূন্যের কোঠায়।

বাংলাদেশ একটি অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। বাংলাদেশের উপকূলয় অঞ্চল বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এদেশে রয়েছে সামুদ্রিক খাবারজাত শিল্পের জন্য অসাধারণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৭১০ কি.মি উপকূলীয় অঞ্চল এবং লোনা পানি ও মিষ্টি পানির চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের জন্য যথাযথ পরিবেশ। বাংলাদেশের আরোহিত মৎস্য সম্পদের প্রায় ৮০% উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়।

 

এর মধ্যে আছে ২৮ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৮৭ প্রজাতির মাছ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। মৎস্যচাষ কৃষি খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনায় একটি খাত। রপ্তানি খাতের মধ্যে চিংড়ি বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রপ্তানি পণ্য। দেশের মোট উৎপাদিত চিংড়ির বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং কক্সবাজার এলাকায়।

হিমায়িত চিংড়ি বাংলাদেশের একটি ১০০ ভাগ কৃষিভিত্তিক ও রপ্তানীমুখী শিল্পখাত। সারাদেশের গ্রামগঞ্জের প্রায় দেড় কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন, বিপনন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানীতে নিয়োজিত রয়েছে। হিমায়িত খাদ্য দেশের রপ্তানী বাণিজ্যে অত্যন্ত পুরোনো একটি খাত। নানা চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে আমরা দীর্ঘ প্রায় পাঁচদশক ধরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানী বাণিজ্যে নিয়োজিত রয়েছি।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমরা স্বাধীনতার পর মাত্র ২.৩৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আরম্ভ করে, ধীরে ধীরে ২০১৩-১৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫,০০০ কোটি টাকার উপরে রপ্তানি আয় উন্নীত করেছি। কিন্তু নানাবিধ কারণে দিন দিন চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় রপ্তানিও ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শুধুমাত্র হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে ৩,৭৬৮ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছি। সুতরাং উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি পুনরুদ্ধারে নিম্নলিখিত বিষয়াদির প্রতি সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন দেশের ১০০ ভাগ রপ্তানিমুখী কৃষিভিত্তিক হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানীকারকদের একক সংগঠন হিসেবে বিগত পাঁচ দশক যাবত দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে যথাক্রমে জিডিপি-তে এখাতের অবদান ৩.৫২% এবং কৃষিভিত্তিক খাতে অবদান ২৬.৩৭%। বর্তমানে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ১০৫টি প্রক্রিয়াজাতকৃত হিমায়িত মৎস্যজাত পন্য রপ্তানি শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এ সব কারখানাগুলো বিশ্বমানের অর্থাৎ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএসএফডিএ অনুমোদিত। এছাড়া সকল কারখানা হ্যাসাপ, জিএইচপি, জিএমপি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রন আইন ও বিধিমালা মেনে চলে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে হিমায়িত মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে আসছে। আমদানিকারক দেশসমূহের মধ্যে- ইউনাইটেড কিংডম (গ্রেট ব্রিটেন), নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ষ্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস, পর্তুগাল, রাশিয়া, ইউএসএ, জাপান, চায়না, সৌদি-আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত অন্যতম।

দেশের শতভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রক্রিয়াজাতকৃত হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি শিল্প খাত আজ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে এ খাতের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বাগদা ও গলদা চিংড়ি দেশের স্থানীয় বাজারের সাথে অসম প্রতিযোগীতায় পড়েছে। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ৩০ হতে ১০০ পর্যন্ত গ্রেডের বাগদা চিংড়ি কেজি প্রতি ৬০০/৭০০টাকা দরে এবং গলদা চিংড়ি আরো অধিক দামে  বিক্রি হচ্ছে। যা ঐ গ্রেডের বাগদা চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি।

অন্যদিকে, অধিক ফলনশীল প্রজাতি ভেন্নামি চিংড়ি একই গ্রেডে কেজি প্রতি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫০টাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে দেশের রপ্তানিকারকরা রপ্তানি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বাগদা চিংড়ি স্থানীয় বাজার মূল্য হতে বেশি মুল্যে ক্রয় করে ভেন্নামি চিংড়ির মূল্যে সীমাহীন লোকসানে রপ্তানি করছে।

দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিফলন আশা করছি আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে। অতীতে সরকারের বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের নীতি সহায়তা পেয়ে হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারী রপ্তানিখাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তাই চিংড়ি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও রপ্তানি পুনরুদ্ধার হলে আগামী ১০ বছরে আমরা বর্তমান রপ্তানি আয় কম করে হলেও দশগুণ বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি সম পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবো।

গত ১৫বছর ধরে আমাদের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তর আমাদেরকে ভেনামী চিংড়ি উৎপাদনের পাইলট প্রজেক্ট করার অনুমতি দেন। আমরা খুলনা জেলার পাইকগাছাস্থ বিএফআরআই লোনা পানি কেন্দ্রে বিএফএফইএ সদস্য প্রতিষ্ঠান যশোরস্থ এম.ইউ সী ফুড্স লিঃ নামীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় একটি পাইলট প্রজেক্ট করে সফলতা অর্জন করেছি। যেখানে "সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে" বাগদা চিংড়ি প্রতি হেক্টর ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি উৎপাদন হয়, সেখানে ভেনামি চিংড়ি একই পদ্ধতিতে চাষ করে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার কেজি।

তাই লোনা পানির বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি অনতিবিলম্বে বাণিজ্যিকভাবে নতুন প্রজাতির এই ভেনামি চিংড়ি চাষ হ্যাচারিসহ উন্মুক্ত করা হলে দেশের জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণ হবে, এখাতের রপ্তানি কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে এবং ইতোমধ্যে কাঁচামাল অর্থাৎ চিংড়ি মাছের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো পুনরায় চালু হবে এবং দেশের বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

বর্তমানে হ্যাচারিগুলোতে যে বাগদা চিংড়ির পোনা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই সংক্রামক যুক্ত, ফলশ্রুতিতে চাষাবাদের সময় অধিকাংশ পোনা মারা যায়। তাই অনতিবিলম্বে বর্তমান হ্যাচারিগুলোকে সরকারি, বিশ্ব ব্যাংক কিংবা এনজিও-এর সহায়তায় আধুনিকায়ন করে জীবাণুমুক্ত পোনা উৎপাদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিগত বহুবছর যাবৎ চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন যথাঃ ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন, বাঁধ নির্মাণ, চিংড়ি চাষের ঘের খনন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি তেমন কাজ পরিকল্পিত ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি; যা চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি করার জন্য একান্ত আবশ্যক।

আমাদের চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোতে কাঁচামালের স্বল্পতাসহ নানাবিধ আওতা বহির্ভূত কারণে লোকসান দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে, অনেকগুলো কারখানা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে এবং বেশিরভাগ শিল্পই রুগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই এই রপ্তানি শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সবকিছু পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে অন্যান্য খাতের মতো আমাদের কারখানাগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য একটি সুপারিশমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য খাতের ন্যায় এখাতে রূগ্ন/বন্ধ কারখানা চালু করার জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ সরকারি একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালার আওতায় এনে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমূহ ক্ষতি থেতে রক্ষা পাবে।

কাঁচামাল অর্থাৎ রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির স্বল্পতার কারনে মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহৃত হওয়ায় রপ্তানিকারকদেরকে আভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। চিংড়ি ও মাছ পঁচনশীল পণ্য বিধায় এই পণ্যটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে  হ্রাস হলেও ব্যাংক ঋণে ক্রয় হওয়ায় নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হয়।

উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে ইউরো, রুবল ও ইয়েনের মূল্যস্ফীতি ঘটায় হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের রপ্তানি মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং আমরা কম মূল্যে আমাদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির উপর বিদ্যমান ০.৫০% সোর্স ট্যাক্সকে কে ০.২৫%-এ রূপান্তর করে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে অনুমোদন ঘোষণা করা হলে এ খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ও রপ্তানিকারকরা টিকে থাকতে পারবে।

সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা কখনোই বেসরকারি কোম্পানির আয় হতে পারে না। বরং তা কাঁচামাল ক্রয়সহ উৎপাদন খরচেরই একটি অংশ, যা রপ্তানি মূল্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করে থাকে। হিমায়িত মৎস্যপণ্য রপ্তানিতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তার উপর অগ্রীম আয়কর কর্তন ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেটে নগদ সহায়তার উপর অগ্রিম আয়কর কর্তনের হার ছিল ৩% আর বর্তমান অর্থ বছরে উক্ত অগ্রীম আয়কর ১০% হারে দিতে হচ্ছে।

প্রতিবেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ত্বরাম্বিত করার স্বার্থে কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা প্রয়োজন। আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে তৈরি পোশাক ও  টেক্সটাইল খাতের ন্যায় হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স এর হার নন-পাবলিক, পাবলিক ও সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৫% ও ১০% নির্ধারনের অনুরোধ করছি। বর্তমান অর্থ বছরে হিমায়িত খাদ্য খাতে কর্পোরেট ট্যাক্স এর হার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫% এবং নন-পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৫% বিদ্যমান আছে।

বিশ্বজুড়ে করোনা (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাবে আজ চিংড়ি খাতের আন্তর্জাতিক চাহিদা হ্রাস পেয়েছে কারন এই পণ্যটি বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের নিকট বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের শুরু হতে চিংড়ির দাম ১-৩ ডলার পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। তদুপরি, কন্টেইনার স্বল্পতার কারনে জাহাজ ভাড়া বাবদ রপ্তানি খরচ প্রতি ৪০ ফুট কন্টেইনারে ৫ থেকে ৭ হাজার মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল নেতিবাচক প্রভাবে বহুল সম্ভাবনাময় এ খাত আজ হুমকির সম্মুখীন।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ জনিত এই সংকটময় মুহুর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতটিকে অস্তিত্ব লড়াইয়ে টিকে থাকার লক্ষ্যে এবং দেশের স্বার্থে শতভাগ রপ্তানিযোগ্য এই কৃষিজাত পণ্য মাঠ পর্যায় হতে রপ্তানি পর্যন্ত কার্যক্রম চালু রেখে মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন অব্যাহত রাখার জন্য হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় ১০%-এর স্থলে ২০%-এ উন্নীত করা আবশ্যক।

আমাদেরকে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে আধা-নিবিড় ও নিবিড় চিংড়ি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, যন্ত্রপাতি ও উপকরণসমূহ বিদেশ হতে আমদানি করার উপর আসন্ন বাজেটে "শুন্য" ট্যাক্স ধার্য করার প্রস্তাব করছি। এছাড়াও  চিংড়ি হ্যাচারিতে  ব্যবহৃত স্পেসিফিক প্যাথোজেনস ফ্রি (এসপিএফ) বা ভাইরাসমুক্ত মা চিংড়ি (ব্রুড)  শুল্কমুক্ত সুবিধায়  আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশে চিংড়ি চাষ, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিখাতে মূল্যবান বৈদশিক মুদ্রা উপার্জন বৃদ্ধি পাবে ও অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

২০২০ সালের ৫ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন।  সরকার ঘোষিত এই আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের শর্তে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তি উল্লেখ থাকায় হিমায়িত প্রক্রিয়াজাতকারী রপ্তানিকারকদের স্বল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অতি সামান্য পরিমাণ সুবিধা  পেয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সারাবিশ্বে কম করে হলেও এখনো অব্যাহত আছে এবং কবে ইহা হতে সম্পূর্নভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত। বর্তমানে বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। একদিকে কাঁচামালের সংকট, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন এবং অন্যান্য রপ্তানিকারক  দেশসমূহের সাথে প্রতিযোগিতা। এছাড়া রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে কাঁচামালের ক্রয় মূল্যসহ উৎপাদন খরচ সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে কম উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং সস্তামূল্যের ভেনামি চিংড়ির প্রভাবের কারনে আমরা আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় (মার্চ ২০২২ পর্যন্ত) প্রায় ১৩.২৫% পিছিয়ে আছি।

ফলে যে সকল প্রতিষ্ঠান সরকারের দেয়া প্রণোদনা বাবদ ঋণ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা পেয়েছে, তারা উক্ত ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স য় করতে পারে নাই। সুতরাং তাদের পক্ষে এ ঋণ বর্তমানে পরিশোধ করতে হলে চলমান রপ্তানি পুনরায় বাধাগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায়, দেশের অন্যতম বৃহত্তম হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য  রপ্তানী খাতকে সচল রাখা এবং অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বার্থে অত্র খাতে প্রদত্ত প্রণোদনা বাবদ অর্থের ৫০% অনুদান হিসেবে রূপান্তর এবং অবশিষ্ট ৫০% অর্থ ৪.৫০% হার সুদে এক বছরের স্থলে তিন বছরে পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করছি। অপরদিকে নানাবিধ কারনে যে সকল হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত এ সুযোগ পাননি, তাদেরকেও এ সুযোগের অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারকে একটি নির্দেশনা প্রদানের জন্য আহ্বান করছি।

প্রথমেই বলেছিলাম, বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোর অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে লোনা পানির বাগদা চিংড়ি ও মিঠা পানির গলদা চিংড়ি রপ্তানি করে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশে শতাধিক হ্যাচারি থাকলেও এই রেণু উৎপাদনে তাদের সফলতা খুবই নগণ্য।

ফলে অধিকাংশ ঘের মালিক গলদা চিংড়ির রেণুর জন্য খাল বিল, নদী নালার উপর নির্ভর করে এবং তাতেও রেণুর চাহিদায় ঘাটতি থেকে যায় বলে চোরাই পথে ভারত থেকে আসা রেণু সেই ঘাটতি কিছুটা পূরন করে। গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদনের জন্য যে সমস্ত হ্যাচারিগুলো আছে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আসন্ন বাজেটে প্রস্তাব করছি। যতদিন পর্যন্ত এস্ব হ্যাচারিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাবে, ততদিন পর্যন্ত বিদেশ থেকে এসপিএফ গলদার রেণু আমদানি করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে।

আমাদের দেশে এক সময় হরিণা, চাকা, চালি চিংড়িসহ প্রচুর কাঁকড়া প্রাকৃতিকভাবেই উৎপাদিত হতো। এখন বলা চলে নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে এই চিংড়ি ও কাঁকড়া নিধনের কারনে এটাও বিলুপ্তির পথে।

বিশ্ববাজারে ছোট চিংড়ি অর্থাৎ হরিণা, চাকা, চালি এর প্রচুর চাহিদা আছে। এই চিংড়িগুলো সি-ফুড রেস্টুরেন্টে খুবই উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে বিবেচিত এবং বলা চলে প্রায় প্রতিটি আইটেম প্রস্তুত করার জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য। স্বাধীনতাত্তোর সময় থেকে গত দুই যুগের আগ পর্যন্ত এই চিংড়িগুলো প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হতো। স্থানীয় বাজারেও এই চিংড়ির প্রচুর চাহিদা আছে। ক্রমশ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আভ্যন্তরিন চাহিদা পূরনের জন্য এর দাম যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ঠিক তেমনই স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারেও এর রপ্তানি এখন শূন্যের কোঠায়।

আসন্ন বাজেটে হরিণা, চাকা, চালি চিংড়ি উৎপাদন কিভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে এই বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই) এ বিষয়টি নিয়ে অনতিবিলম্বে এর গবেষণা ও পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিতে পারে। এই কারণে বিএফআরআই এর জন্য আসন্ন বাজেটে অর্থের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি বিএফআরআই সফলতা লাভ করে, ধরে নেয়া যেতে পারে শুধুমাত্র এই ছোট চিংড়ি রপ্তানি করার জন্য ভবিষ্যতে কমপক্ষে ৫০টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার প্রয়োজন হবে।

পৃথিবীর যে সকল দেশে চিংড়ি মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে, সে সকল দেশে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য চিংড়ি ইন্সুরেন্স চালু আছে। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই চিংড়ি মাছ উৎপাদন করার জন্য কোন ইন্সুরেন্স নীতিমালা নেই। একজন চিংড়ি চাষী যখনই চিংড়ি উৎপাদনের জন্য ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে যান, তখনই ব্যাংক ম্যানেজার চিংড়ি ইন্সুরেন্স না থাকার কারনে ঐ চিংড়ি চাষীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহযোগী জামানত আনতে বলেন।

একজন গরিব চিংড়ি চাষীর পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে সহযোগী জামানত ব্যাংকে দিয়ে ঋণ পাওয়া সম্ভব হয় না, আর অর্থের অভাবে পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করাও হয়ে ওঠে না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে, চিংড়ির অভাবে দিনের পর দিন একটা একটা করে কারখানা বন্ধ হচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, দেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো এতটাই প্রভাবশালী যে, সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্বেও তারা চিংড়ি চাষের জন্য নীতিগতভাবে ইন্সুরেন্স কভারেজ দিচ্ছেন না। দেশের চিংড়ি চাষী ও রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে আসন্ন বাজেটে আমরা এর একটা প্রতিফলন দেখতে চাই।

আমরা জানতে পেরেছি, খুব তাড়াতাড়ি সরকার বিদ্যুৎসহ জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোকে এর আওতা বহির্ভূত রাখার জন্য সুপারিশ করছি। উপরন্তু রপ্তানি শিল্পের জন্য সরকার কয়েকটি ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এই মুল্য সংযোজন কর হতে অব্যাহতি প্রাপ্তির যোগ্য হওয়া সত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই কর ফেরত পায় না। এটিকে সহজীকরণ করার জন্য সুপারিশ করছি।

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির পাশাপাশি হিমায়িত কাঁকড়া রপ্তানিও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ইতোমধ্যেই হিমায়িত নরম কাঁকড়া রপ্তানির জন্য দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চ লের সাতক্ষীরা জেলাতে তিনটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে।

গত পাঁচ বছরে এই খাত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এই খাতটিকে যদি এখন থেকেই সরকারের গ্রহণযোগ্য নীতিমালার আওতায় এনে নার্সিং করা যায় তাহলে আগামী পাঁচ বছরে শুধুমাত্র হিমায়িত কাঁকড়া রপ্তানি করে কয়েকশত মিলিয়ন ডলার বাৎসরিক আয় করা সম্ভব।  

এছাড়া চিংড়ি ও মৎস্যজাত  পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষীদেরকে বিনা সুদে ঋণ প্রদানের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, কৃষিখাতের ন্যায় মৎস্য চাষীদের জন্য ভিজিএফ কার্ড প্রথা প্রবর্তন এবং মৎস্য চাষের খাজনা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে না করে কৃষিভিত্তিক করা। চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধকরনের জন্য চাষীদেরকে বিশেষ তহবিল গঠন করে সহায়তা প্রদান করা জরুরি। আধুনিক চিংড়ি চাষের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিকল্পে উপকূলীয় খাসজমি হতে প্রতিটি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাকে ১০০ একর করে জমি বরাদ্দ প্রদান করা প্রয়োজন।

বর্তমানে দুইটি উপায়ে কাঁকড়া বাংলাদেশের থেকে রপ্তানি হয়ে থাকে। তার একটি জীবন্ত কাঁকড়া আর অন্যটি হিমায়িত কাঁকড়া। বিশ্ব বাজারে জীবন্ত কাঁকড়া রপ্তানী করার ক্ষেত্রে ডিমওয়ালা কাঁকড়ারও যথেষ্ট চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ থেকে নির্বিচারে কিছু রপ্তানিকারক ডিমওয়ালা ও মা কাঁকড়া রপ্তানি করছে। আইনের মাধ্যমে এই জীবন্ত ডিমওয়ালা ও মা কাঁকড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে হবে।

কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম পর্যন্ত কাঁকড়া আহরন ও জীবন্ত কাঁকড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকলেও চেরাই পথে এই কাঁকড়া ধরা ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম না হওয়ার পরও  ইলিশ মাছের প্রজনন সময়কাল হওয়ায় এই সময় অর্থাৎ মে মাসের ২০ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৬৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে বিধায় ইলিশের সাথে সাথে এই কাঁকড়া আহরণও নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে যে নরম কাঁকড়া চাষের জন্য জেলেদের থেকে সরবরাহকৃত কাঁকড়াকে আমরা বীজ কাঁকড়া বলে থাকি এবং যাহার আকার হলো ৭০ গ্রাম থেকে ১৮৫ গ্রাম পর্যন্ত। তাই নরম কাঁকড়ার চাষ ও রপ্তানির জন্য জেলেদের ন্যূনতম ৭০ গ্রাম থেকে কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ৭০ গ্রামের একটি বীজ কাঁকড়া খামারে চাষের মাধ্যমে পরবর্তী খোলস দেয়ার সময় ৯০-১০০ গ্রামে পরিণত হয়। কিন্তু ইলিশের সাথে সাথে ঐ সময় যেহেতু কাঁকড়া আহরনও নিষিদ্ধ থাকে সেজন্য বিশ্ববাজারে চাহিদা সর্বোচ্চ থাকার পরও কাঁকড়ার সরবরাহ না থাকায় রপ্তানিকারকদের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে হিমায়িত নরম কাঁকড়া রপ্তানি করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে রপ্তাই বাজার হারানোরও সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। সুতরাং উক্ত সময়ে মাছ বাদে শুধুমাত্র কাঁকড়া আহরণ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ রাখছি।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত জীবন্ত বা হিমায়িত কাঁকড়া সম্পূর্ণই সনাতন ও প্রাকৃতিকভাবে আহরিত। সুতরাং এভাবে যদি নিয়মিতভাবে প্রকৃতি থেকে কাঁকড়া আহরিত হয় সেক্ষেত্রে অচিরেই বাংলাদেশি কাঁকড়া পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সে কারণে কাঁকড়ার পোণা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদনের প্রস্তাব করছি।

আমরা মনে করি, আলোচ্য বিষয়াদি নিরসন করা হলে হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিখাতে বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। সাথে সাথে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের অগণীত চাষী সম্প্রদায় একটি নিশ্চিত আয় হতে উপকৃত হবে, যা দেশ ও দশের জন্য অতীব জরুরি।

এস. হুমায়ুন কবির আমাম সি-ফুড ইন্ডাঃ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।  

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article