মেট্রোরেল চালুর প্রস্তুতি শুরু

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১৯, বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আগামী ১৬ ডিসেম্বরে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হবে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। এ জন্য নেওয়া প্রস্তুতি ও সীমাবদ্ধতাসহ প্রকল্পের অগ্রগতি এরই মধ্যে পাঠানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। 

 

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের কাছে সরকারের অগ্রাধিকার এ প্রকল্পটির অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। সেখানে এমআরটি লাইন ৬-এর ভাড়া আদায়ের জন্য অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন সিস্টেম সফটওয়্যার স্থাপন, সরকারি ভূমি প্রাপ্তিতে অসুবিধার কথা বলা হয়েছে।

তাছাড়া জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলের জন্য বিশেষায়িত স্বতন্ত্র পুলিশ ফোর্স নিয়োগের প্রস্তাব যাচাই শেষে আবার যাচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারি জমি পেতে অসুবিধা রয়ে গেছে। এমআরটি লাইন ৬-এর লিফট, এস্কেলেটর, সিঁড়িতে যাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ওঠা-নামা, পথচারীদের সুবিধার্থে মানসম্মত ফুটপাত ও স্টেশনপ্লাজা নির্মাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে জমি পেতে এখনো বিলম্ব হচ্ছে। 

গণপূর্ত অধিদপ্তর, বিমানবাহিনী, রাজউক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডভুক্ত এসব জমি লাগবে মেট্রোরেলের। 

এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থার কাছে চিঠি দেওয়া হয়; কিন্তু অগ্রগতি না হওয়ায় গত ২৮ এপ্রিল একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আবার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর মধ্যে অগ্রগতি হচ্ছে- গত ১৩ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং ডিএমটিসিলের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের পৃথক সভায় জমি দিতে সম্মত হয়েছে বিমানবাহিনী।

জানা গেছে, মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলে প্রতিদিন ভোর থেকে দুই দিক থেকে যাত্রা করবে। প্রাথমিকভাবে রাত সাড়ে ১১টায় সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে। শুরুতে এসব ট্রেনে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এ জন্য ভাড়া আদায়ে বসবে অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন সিস্টেম সফটওয়্যার; কিন্তু ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনই তা কার্যকর হচ্ছে না। 

এ ক্ষেত্রে মেট্রোরেল চালুর অন্তত তিন-চার মাস আগে ভাড়ার হার অনুমোদন করতে চাইছে সরকার। কারণ ভাড়ার হার অনুযায়ী সফটওয়্যারে ইনপুট দিয়ে টিকিট চূড়ান্ত করতে হবে। তবে যাত্রীদের জন্য অবশ্যই আধুনিক এবং অনলাইনভিত্তিক ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা থাকবে।

২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ভাড়া নির্ধারণে একটি কমিটি করে। ওই কমিটির প্রথম সভা হয় ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ৩০ ডিসেম্বর ডিএমটিসিএল ভাড়া নির্ধারণের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব কমিটির কাছে পাঠায়। দ্বিতীয় সভা হয় ১৬ জানুয়ারি। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়ার সারসংক্ষেপ গত ২৭ মার্চ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। 

এর পর গত ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় সভা। গঠিত কমিটি ওই সভায় এমআরটি লাইন ৬-এর ভাড়া নির্ধারণের সুপারিশ চূড়ান্ত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। ভাড়া নির্ধারণ চূড়ান্ত হলে অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন সিস্টেম সফটওয়্যার চালু করা সম্ভব হবে। 

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও ভাড়া নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক নীলিমা আখতার বলেন, ভাড়া নির্ধারণে গঠিত কমিটি তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি প্রাথমিক হার তবে তা চূড়ান্ত নয়। মন্ত্রণালয় তা পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে।

সূত্র বলছে, প্রাথমিক হার অনুযায়ী একজন যাত্রী মেট্রোরেলে ওঠার পর সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে দুই স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবেন। পরবর্তী প্রতি স্টেশনে যেতে বাড়তি ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে। উত্তরার তিনটি স্টেশন বাদ দিলে অন্য সব স্টেশনের প্রতিটির মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটার বা তার কম। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে প্রায় ১০ টাকা। মোট ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে পারবেন যাত্রীরা। 

বর্তমানে রাজধানীতে বড় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসের ভাড়া ২ টাকা ৫ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা। মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পথ পাড়ি দিতে লাগবে ৯০ টাকা। ভাড়ার প্রস্তাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খরচ, জনবলের বেতন-ভাতা এবং কোচ ও অন্যান্য স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ।

মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধে থাকবে র‌্যাপিড পাস। এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি এবং ডিএমটিসিএলের মধ্যকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটর সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করতে গত ১৮ জানুয়ারি বৈঠক হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। 

ওই সভায় মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি ৩টি সভা করে। এ ছাড়াও গত ২৩ মার্চ ডিটিসিএ ও ডিএমটিসিএল একটি দ্বিপক্ষীয় সভা করে। সেখানে সম্ভাব্য চুক্তির ২২টি বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি বিষয় ক্লিয়ারিং হাউস ব্যবহারে কমিশন এবং ডিটিসিএ কর্তৃক নিয়োজিত ক্লিয়ারিং হাউস ব্যাংক কর্তৃক মেট্রোরেল স্টেশন থেকে নগদ অর্থ ও ব্যাংকে জমার ব্যপারটি চূড়ান্ত করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মেট্রোরেলে দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা থাকবে। একটা হচ্ছে স্থায়ী কার্ড। অর্থাৎ এ কার্ড রিচার্জ করে পুরো বছর বা মাসে যাতায়াত করা যাবে। প্রতিটি স্টেশনে থাকা মেশিনেও কার্র্ড রিচার্জ করা যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে। নতুবা দরজা খুলবে না। এর পর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে। নতুবা যাত্রী বের হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।

মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশ ফোর্স গঠন করা হবে। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এসংক্রান্ত অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর ২০২১ সালের ১৯ মে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশ ফোর্স গঠনের জন্য ৫৪২টি পদ সৃজনে এবং ৩১টি যানবাহন টিওঅ্যান্ডইভুক্ত (টেবিল অব অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট) করতে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৬ অক্টোবর স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশ ফোর্স গঠনের জন্য ৩৫৭টি পদ সৃজন এবং ২১টি যানবাহন টিওঅ্যান্ডইভুক্ত করতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ। এর পর অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের মাধ্যমে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এমআরটি পুলিশ ফোর্স গঠনের জন্য ৩৫৭টি পদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা হয়।

জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ওই ৩৫৭টি পদ সৃজন এবং ২১টি গাড়ি টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। গত ২১ এপ্রিল প্রস্তাটি ওই সভায় উত্থাপন করা হলে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়ে আলোচ্যসূচি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে জননিরাপত্তা বিভাগের উদ্যোগে গত ১৮ মে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবটি পূণরায় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর সুপারিশ হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মেট্রোরেল লাইন ৬-এর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বর্ধিত অংশের কাজ চলছে। এজন্য অংশীজন সভা, সোশ্যাল স্টাডি, হাউসহোল্ড সার্ভে, ল্যান্ড একুইজিশন প্ল্যান, রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান, এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, বেসিক ডিজাইন এবং ডিটেইলড ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১০০০ মিটার সড়কের রাইট অব ওয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুকূলে হস্তান্তরের জন্য সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল। বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে ডিএমটিসিএল নিজেই পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচালনার কাজে যুক্তদের নিয়োগ দেবে ডিএমটিসিএল।

Share This Article


মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন শেখ হাসিনা

দেশে ডলারের সংকট নেই, ৩৯ ব্যাংকে কেনা আছে বাড়তি ডলার

গণভবনে ডাক পেলেন ৩৩৬২ মনোনয়নপ্রত্যাশী

রবিবারের মধ্যে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা

স্ত্রীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলেন তামিম!

নির্বাচনে আসেন, কার কত দৌড় আমরা সেটা দেখি: প্রধানমন্ত্রী

সময় মতো নির্বাচন, বিএনপি আসলে সংবিধানে মেনে তপশিল পেছানো হবে : ইসি

১০০ আসনে প্রার্থী দেবে কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট

যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন

ভারতের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও চীনের সাথে উত্তেজনা কমাতে বাংলাদেশ বিষয়ে পিছু হটছে যুক্তরাষ্ট্র!

২৪ দিনে ১৯৭ যানবাহনে আগুন, সবচেয়ে বেশি ঢাকায়

শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা