রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসা সহজীকরণে সহায়ক বাজেট চাই

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৩, মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের আওতা বৃদ্ধি, কর ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং স্থানীয় শিল্পায়ন উৎসাহিতকরণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ওপর আমরা জোর দিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৪০টি প্রস্তাব দিয়েছি। এসব প্রস্তাব সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসা সহজীকরণে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

 

এর মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি করদাতার জন্য প্রথম ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর করহার শূন্য রাখা, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫, পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ এবং অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে দেশে বর্তমানে ২৭ লাখ টিআইএনধারী কর দেন। আগামী ১০ বছরে এ সংখ্যা ৮০ লাখে উন্নীত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডকে ১০ বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে প্রতি বছর গড়ে সাত-আট লাখ নতুন করদাতা যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে করদাতাদের কিছু ছাড় বা রেয়াত দেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ৪৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। সে কারণে রাজস্বের পরিমাণও বেশি আসে এ দুটি অঞ্চল থেকে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

বর্তমানে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করহার যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫ ও ৩০ শতাংশ। লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করহার ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছি। এ হার কমানোর বিষয়ে বলা হচ্ছে, তবে এক্ষেত্রে ১২ লাখ টাকার নগদ লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। এ হার রেভিনিউর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে। লেনদেনের নির্দিষ্ট পরিমাণ হিসাব করা যথাযথ হবে না। এভাবে কর ভার লাঘব করা প্রয়োজন যেনো কভিড-পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারেন এবং বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এ অঞ্চলে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেশ হিসেবে সমাদৃত হয়। বাংলাদেশে করপোরেট করহার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক করহারের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া বাংলাদেশে করপোরেট করহার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের তুলনায় ১০ শতাংশ, শ্রীলংকার তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। করপোরেট ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ করের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছি। ৫৩ ই-এর উপধারা (১) অনুযায়ী ১০ শতাংশ উৎসে করকে ৮২ সি-এর আওতায় সর্বনিম্ন কর নির্ধারণ না করে সর্বনিম্ন করের ধারা থেকে ৫৩ ই-কে বাদ দেয়া এবং করহার নির্ধারণ, অ্যাকাউন্টিং মুনাফাভিত্তিক হওয়া উচিত। উৎসে ও মোট প্রাপ্তি/বিক্রির ওপর কর কাটা/সংগৃহীত হওয়া কর সমন্বয়যোগ্য হওয়া প্রয়োজন। ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক বাজেটের অধীনে ১০০ কোটি টাকা (১০০ কোটি) পরিমাণের একটি তহবিল স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষা খাতে গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এ তহবিলের আওতায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য জড়িত প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। আয়কর ব্যবস্থা একটি অটোমেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।

ভ্যাটের আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা এবং টার্নওভার কর ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বার্ষিক টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি এবং পণ্যের ভ্যালু অ্যাডিশন অনুপাতে বা মুনাফা অনুপাতে টার্নওভার ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করছি। আইনের চতুর্দশ অধ্যায়, ধারা ১০০ উপধারা (১) অনুযায়ী বকেয়া কর আদায়ের উদ্দেশ্যে যদি কোনো পণ্য তাত্ক্ষণিকভাবে এবং বিনা নোটিসে জব্দ করা হয়, তবে কমিশনার যত শিগগির সম্ভব নিম্নবর্ণিত ব্যক্তির ওপর জব্দের নোটিস জারি করবেন। বকেয়া কর আদায়ের উদ্দেশ্যে কোনো পণ্য তাত্ক্ষণিকভাবে বিনা নোটিসে জব্দ করা যাবে না।

এইচএস কোড ৫২.০৫ থেকে ৫২.০৭ভুক্ত সুতার ওপর কেজিপ্রতি ৩ টাকা হারে ভ্যাট এবং এইচএস কোড ৫৪.০২ থেকে ৫৪.৮ ও ৫৫.০৯ থেকে ৫৫.১১ভুক্ত সুতার ওপর কেজিপ্রতি ৬ টাকা হারে ভ্যাট ধার্য আছে। স্থানীয়ভাবে দেশীয় উৎপাদিত সুতার ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক তুলা ও কৃত্রিম (মানুষের তৈরি) ফাইবার দিয়ে প্রস্তুতকৃত সব ধরনের সুতার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ৩ টাকা হারে মূল্য সংযোজন কর ধার্য আছে। অর্থাৎ এইচএস কোডভুক্ত ৫২.০৫ থেকে ৫২.০৭, ৫৪.০২ থেকে ৫৪.০৮ ও ৫৫.০৯ থেকে ৫৫.১১-এর আওতাধীন।

জ্বালানি খাতে লুব্রিক্যান্ট পণ্যের ওপর মূসক ১৫ শতাংশ। লুব্রিক্যান্ট অয়েল থেকে উৎপাদিত পণ্যে স্থানীয় ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। অটোমোবাইল শিল্প ইলেকট্রিক ভেহিকল চার্জিং স্টেশন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও উপকরণ দেশীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান প্রয়োজন। এইচএস কোড পরিবর্তনের কারণে অতীতে ১০০ শতাংশ জরিমানার বিধান থাকলেও বর্তমানে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো জরিমানা ব্যতিরেকে সঠিক এইচএস কোড উল্লেখ করে শুল্কায়নের জন্য প্রস্তাব থাকাই যুক্তিসংগত মনে করি। এসআরও নং-১৭২ আইন/২০১৯/২৯-মূসক অনুযায়ী নিবন্ধিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থান ও স্থাপনা ভাড়া যদি কারখানার জন্য হয়, তাহলে মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত হবে। ইকোনমিক জোনে স্থাপিত শিল্পের জন্য নিবন্ধিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বেজার লিজ-রেন্টের ক্ষেত্রে এসআরও নং-১৭২ আইন/২০১৯/২৯-এর প্রয়োগ মূসক স্পষ্টীকরণ ও অব্যাহতি দেয়া উচিত। জেনারেল বন্ড নবায়ন করার ক্ষেত্রে চামড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নতুন বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্তির প্রথম এক বছরের মধ্যে এবং এরপর প্রতি দুই বছরান্তে বন্ড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে বন্ড লাইসেন্স প্রতি তিন বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প খাতের বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা কমনো এবং তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মতো বন্ড লাইসেন্স প্রতি তিন বছরের জন্য নবায়ন করার প্রস্তাব করছি। সূত্র: বণিকবার্তা

Share This Article