পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত আরিফুল বললেন
‘আর ঢাকায় থাকব না, বাড়ি থেকেই অফিস করব’

আরিফুল ইসলামের বাড়ি মাদারীপুরের আমিরাবাদে। চাকরি করেন ঢাকায়। সেখানেই থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটিতে এক দিনের জন্য বাড়ি আসতেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরতেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে তাঁকে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেল।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুচকি হাসেন আরিফুল। চোখেমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে আরিফুল বলেন, ‘আর ঢাকায় থাকব না। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। এখন বাড়িতে থেকেই আসা-যাওয়া করে অফিস করব। বাড়ির মানুষের সঙ্গে থাকব। এটি ভেবেই যেন আনন্দে উৎফুল্লে বারবার হারিয়ে যাচ্ছি।’
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতুর। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধন করবেন। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এ ঘোষণার পর উচ্ছ্বাসে ভাসছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় ২০ থেকে ২৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ গরমের মধ্যে থেকে ক্লান্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে সবার মুখেই ছিল স্বস্তির হাসি।
পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর ২০ থেকে ২৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। সেতু উদ্বোধনের খবরে উল্লাসে মেতেছিলেন তাঁরা। তারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে ছিল। সব শঙ্কা কাটিয়ে পদ্মা সেতু হয়েছে। পদ্মা সেতু তাঁদের জন্য কী, তা তাঁরাই সবচেয়ে ভালো জানেন। কিছুদিন পরেই সেতু দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাবেন— এটি ভেবেই যেন তাঁদের মনে আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে।
শিমুলিয়া ঘাটে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মুর্শিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা পদ্মা পাড়ি দিতে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি, তারা জানি ঘাটে এসে কত ধরনের বিড়ম্বনার পড়েছি। এক মাস পরেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। আমাদের স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। আমরা যে কতটুকু খুশি তা ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না।’
সেলিনা বেগম (৫৬) জানান, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সপরিবার থাকেন। তাঁর বাবার বাড়ি বরিশালের শহরে। তাঁর ভাষ্য, কয়েক বছর আগেও ভাবেননি কখনো সড়কপথে বাড়ি যাবেন। পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহসিকতার কারণে নিজেদের টাকায় খরস্রোতা পদ্মা সেতু হলো। আর কয় দিন পরেই খুব সহজেই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এটি কতটা আনন্দের তা তাঁরাই জানেন।
মাওয়া পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু খুব কাছ থেকে দেখা যায়। আজ বিকেলে দেখা গেল, পদ্মা সেতু দেখতে দর্শনার্থীরা আসছেন। অনেকে এসে সেতুর সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে পদ্মার পাড়ে ঘুরছেন।
এ সময় তানজির হাসান নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ কাছ থেকে পদ্মা সেতু দেখে গেলাম। শুনেছি ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। খুব আশা, সেদিন সেতু দিয়ে পদ্মাপার হব। ওই পারে যাব।’
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে, সময়ও কমবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।