আর্থিক খাতে পিকে হালদার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকতে পারে যারা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৪৫, শনিবার, ২১ মে, ২০২২, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
পিকে হালদার
পিকে হালদার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আর্থিক খাতে পিকে হালদারের লুটপাটের ঘটনায় নিয়ন্ত্রক ৭ সংস্থা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কোম্পানির নিবন্ধক পরিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা।

এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন সনদ নকল করলেও সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কোনো কোনো শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা পিকে হালদারের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে ঘুষ নিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালজালিয়াতির বিষয়গুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে না জানিয়ে গোপন করেছে। গত বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে পিকে হালদারের সমুদয় শেয়ার জব্দ করেছে বিএসইসি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন ও নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এসব সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। উলটো ঘুসের বিনিময়ে কতিপয় কর্মকর্তা নানাভাবে পিকে হালদার গংকে সহায়তা করেছেন। যে কারণে তারা পদে পদে অনিয়ম করে আর্থিক খাত থেকে টাকা বের করে নিয়েছেন।

নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নামে বেনামে ব্যাংক হিসাব, আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), ভ্যাট শনাক্তকরণ নম্বর (ভিন), ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছেন। বেআইনিভাবে ঋণ নিয়ে বেনামি কোম্পানির নামে শেয়ার কিনে মালিকানা দখল করেছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেক বেআইনিভাবে ব্যবহার করেও জালিয়াতি করেছেন।

পিকে হালদার ২০১৪ সাল থেকে লুটপাট শুরু করেন। ২০১৯ সালের শেষদিকে দেশ ছাড়েন। ২০১৯ সালে তার নামে দুদক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে নভেম্বরে পালিয়ে যান। নামে-বেনামে ৪২টি প্রতিষ্ঠান খুলেন ১৬ জনের নাম ব্যবহার করেছেন। এরা সবাই পিকে হালদারের আত্মীয় ও অনুগত কর্মী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিকে হালদার জালিয়াতি করতে খোলেন ভুয়া কোম্পানি। কোম্পানি খুলতে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এটি নবায়ন করতে হয় প্রতিবছর। করপোরেশনের সুপারভাইজার সরেজমিন তদন্ত করে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেন। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানির ক্ষেত্রে এসব কাগজপত্র নকল করে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স তৈরি হয়েছে।

সেই লাইসেন্স দিয়ে কোম্পানির নিবন্ধন নিয়েছে পিকে গং। নিবন্ধন নিতে আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়- এর মধ্যে আছে কোম্পানির নামের ছাড়পত্র, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিক্যালস অব অ্যাসোসিয়েশন, নিবন্ধিত অফিসের ঠিকানা, পরিচালকের সম্মতিপত্র ইত্যাদি। সবার আগে কোম্পানির নামের ছাড়পত্র নিতে হয়। নামের ছাড়পত্র পেলে অন্য কাগজপত্র দিয়ে করতে হয় আবেদন।

বেশিরভাগ কোম্পানির নামে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। আবেদনও করা হয়নি। নিজে নিজেই কোম্পানি বানিয়েছেন। অন্যান্য নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে তদারকির অভাব ছিল। কোম্পানির ঠিকানাও ছিল ভুয়া। কিন্তু তদারককারী সংস্থা আরজেএসসি এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেনি।

জালিয়াতির ঘটনাও সামনে আসেনি। সিটি করপোরেশন থেকেও তদারকি করা হয়নি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হলেও সেগুলো বিষয়ে পরে কোনো তদারকি হয়নি।

কোম্পানির নামে লেনদেন করতে ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। বেশিরভাগ ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে হিসাব খোলা হয়। কিছু ব্যক্তির হিসাব ভাড়া নিয়েও জালিয়াতি করেছেন পিকে হালদার। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে সহায়তা করেছেন। মানি লন্ডারিং আইন কার্যকরের পর থেকে ব্যাংকে বেনামে হিসাব খোলার সুযোগ নেই।

কিন্তু বেনামে হিসাব খোলা বন্ধ হয়নি। পিকে হালদারও সেই কৌশলটি কাজে লাগিয়েছেন। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খুশি করে বেনামে হিসাব খুলেছেন। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তেও বেনামি হিসাব খোলা ও সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে। কিছু হিসাব সঠিক থাকলেও এগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে না জানিয়ে গোপন করেছে।

কোম্পানির নামে আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট শনাক্তকরণ নম্বর (ভিন) নিতে হয়। এগুলোও এনবিআর থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও দু’একটি কোম্পানি ছাড়া বাকি সবগুলোই ভুয়া। তবে এনবিআর থেকে পিকে হালদারের ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কোম্পানিগুলোর মালিকানা দখলে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে নামে-বেনামে শেয়ার কিনেছেন। মালিকানা বদল বা পরিচালক নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে জানাতে এবং অনুমোদন নিতে হবে। আরজেএসসিকেও জানাতে হয়। এক্ষেত্রে তিন সংস্থাই তদারকিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এদিকে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লুটপাটের ঘটনা তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রধান করা হয় ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানকে। পরে আদালত আরও দুজনকে কমিটিতে যুক্ত করেন। সাত সদস্যের কমিটি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে (বিআইএফসি) লুটপাটের ঘটনার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে গভর্নরের কাছে জমা দিয়েছে গত বছরের অক্টোবরে।

কমিটি লুটপাটের জন্য তদারকির তিন সংস্থার সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের নীরব ভূমিকাকে দায়ী করেছেন। সংস্থাগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং কোম্পানিগুলোর নিবন্ধক আরজেএসসি।

এতে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে লুটপাটের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অথচ প্রতিটি সংস্থারই নিজস্ব আইনে অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আইনি ভিত্তি ছিল। প্রতিবেদনে বিআইএফসির অনিয়ম-দুর্নীতির প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন এবং সংশিষ্ট ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৫ সালে বিআইএফসি মালিকানায় বদল হয়। পরপর তিন দফা মালিকানা বদল হয়ে পিকে হালদার গ্রুপের কাছে যায়। বিআইএফসির আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে এতে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিচের স্তর থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল।

সেই সুপারিশ তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম আটকে রেখেছিলেন। তিনি তা ওপরের দিকে উপস্থাপন করেননি। ফলে এতে প্রশাসক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এতে প্রশাসক নিয়োগ করলে পরে জালিয়াতির ঘটনাগুলো ঠেকানো যেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ ২-এর আওতায় একটি উপবিভাগ ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শন করার জন্য। এ বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ওপর যথাযথ পরিদর্শন হয়নি। পরে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ হলে সেখান থেকেও তদারকির অভাব ছিল।

ওই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর একে সুর চৌধুরী। তদারকির ক্ষেত্রে তার গাফিলতি রয়েছে। যে কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক নেতিবাচক তথ্যই ওপরের দিকে যেত না এবং প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সুর চৌধুরীর পর ডেপুটি গভর্নর হিসাবে এ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন এসএম মনিরুজ্জামন। কমিটি ওই দুই ডেপুটি গভর্নরসহ, নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তদারকি সংস্থা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিচের স্তর থেকে ওপরের স্তরের কর্মকর্তা যারা বিআইএফসির অবৈধ সুবিধা দেওয়ার তালিকার ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন একটি তালিকা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী, তিনি অবসরে যাওয়ার পর অপর ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান এ বিভাগের দায়িত্বে, মহাব্যবস্থাপক ও নির্বাহী পরিচালক হিসাবে ছিলেন শাহ আলম। তিনজনই ওই তালিকায় আছেন।

প্রতি দফায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বদল হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি নমনীয় ভূমিকা রেখেছে। তারা শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম পরিপালন করে অনুমোদন দেননি। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা বদলের ক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে বেনামি কোম্পানির নামে।

এসব কোম্পানির নামে কীভাবে নিবন্ধন দেওয়া হলো সে প্রশ্ন তুলেছে কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে একটি পরিদর্শক দল কোম্পানিগুলোর ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরিদর্শক দল ওই ঠিকানায় কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

এসব কোম্পানির নামে শেয়ার হস্তান্তরে যেমন কোনো নিয়ম মানা হয়নি, তেমনি কোম্পানির পর্ষদ গঠনেও নিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিএসইসির সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা ছিল নীরব। কোম্পানি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আরজেএসসি যথাযথ ভূমিকা নেয়নি। নিবন্ধন দেওয়ার পরও তারা এসব কোম্পানির কোনো তদারকি করেনি। তাদের কাছে কোম্পানিকে যেসব জবাবহিদিতা করতে হয় সেগুলো তারা করেনি। এ ব্যাপারে আরজেএসসি নীরব ভূমিকা পালন করেছে।

মালিকানা বদলের ক্ষেত্রে প্রথম দফায় খ্যাতিমান লোকদের পরিচালক পদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। পরে বেনামে নেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের ও বিএসইসি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি।

আরজেএসসি নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন নিয়ম মানেনি। তেমনি নিবন্ধন দেওয়ার পর কোম্পানির কার্যক্রমে কোনো তদারকি করেনি। অথচ প্রতিটি পর্যায়ে সব সংস্থার নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের কথা। তারা যে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি বলে লুটপাটের সুযোগ হয়েছে।

এসব কোম্পানির বেশিরভাগের ঠিকানা পুরানা পল্টনের ইস্টার্ন ট্রেড সেন্টারে ও কাওরান বাজারের ডিএইচ টাওয়ারে। বিআইএফসির মালিকানা যেসব কোম্পানির নামে ছিল সেগুলোর মধ্যে দুটি কোম্পানি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের একইদিনে নিবন্ধিত হয়েছে আরজেএসসিতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইন্টারন্যশনাল লিজিং ও পিপলস লিজিংয়ের ব্যাপারে একই তদন্ত হওয়ার কথা। তদারকির ব্যর্থতার ধরন একই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে ওই তদন্তের আলোকেই প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি কাঠামো জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশিদুল হক আদালতে বলেছেন, শাহ আলম দুর্নীতি আড়াল করতে মাসে ২ লাখ টাকা করে ঘুস নিতেন। এসকে সুর চৌধুরী জালিয়াতি আড়াল করার ব্যবস্থা করতেন। তিনিও আর্থিক সুবিধা নিতেন। পরিদর্শন বিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে ৫-৭ লাখ টাকা ঘুস দেওয়া হতো। পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে বলেছেন, জালিয়াতি আড়াল করতে পিপলস লিজিং থেকে শাহ আলমকে মোট অঙ্কের ঘুস দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এস কে সুর অবসরে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান কিছুদিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। যে কারণে তাদের তিনজনকেই দুদক তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে তিনজনই বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা দায়িত্বে ছিলেন বলে দুদক নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, তাদের কারও বিরুদ্ধেই কোনো মামলা হয়নি। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিতও হয়নি। যে কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে শাহ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজার থেকে শেয়ার কিনে পিকে হালদার বেনামে একে একে ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। শেয়ার বেচাকেনার সমুদয় তথ্য বিএসইসিতে থাকে। বড় অঙ্কের শেয়ারের লেনদেনগুলো তারা খতিয়েও দেখে। কিন্তু চারটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদল হয়ে গেল বিএসইসি কিছুই করেনি। তবে গত বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে তারা পিকে হালদারের সমুদয় শেয়ার জব্দ করেছে।

আরজেএসসি থেকে কয়েকটি কোম্পানির নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে সংস্থাটি পরবর্তীকালে কোনো তদারকি করেনি। যে কারণে ভুয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যেভাবে আইনি কাঠামো রয়েছে তাতে যে কোনো জালিয়াতির ঘটনা এক বছরের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পাঠায় সেগুলো পর্যালোচনা করলেই জালিয়াতি বেরিয়ে আসে। এছাড়া সংস্থাগুলো নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে নানা ঘটনা জানতে পারে। বিভিন্ন উৎস থেকে জালজালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

পিকের ক্ষেত্রে তা হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রকরা তা আমলে নেয়নি। উলটো ধামাচাপা দিয়েছে। এখন দেখতে হবে কারা এগুলো ধামাচাপ দিয়েছে। কাদের দায়িত্ব কী ছিল। তারা কেন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো একটি বিশদ তদন্ত করে দেখা দরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুদকের দায়িত্ব হলো অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করা। নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেও তদন্ত করে অনেককে আইনের আওতায় আনছে। কিন্তু পিকে হালদার টানা ৫ বছর জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করল। অথচ তারা জানল না। এক্ষেত্রে দুদককেও ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তারাও বিষয়টি ৫ বছরে টের পেল না। তাদেরও ব্যর্থতা আছে।

পিকে হালদারের কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতে বড় জালিয়াতি। এটি প্রতিরোধে কার কী ভূমিকা থাকার কথা, তারা কেন পালন করেননি-তা বিশদ তদন্ত করে বের করা উচিত। একই সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হতে পারে।

Share This Article


কক্সবাজারের হোটেলে আ.লীগ নেতার হাত-পা বাঁধা লাশ

বিমানবন্দরে ৬৮টি স্বর্ণের বারসহ বিমানের মেকানিক আটক

চাচা-ভাতিজাকে হত্যায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের যাবজ্জীবন

মালয়েশিয়ায় যেতে লাগে না পাসপোর্ট-ভিসা!

১৭ বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করে আসছে চক্রটি

‘পাহাড়ের চূড়ায় জমি কিনে আস্তানা করেছে ইমাম মাহমুদের কাফেলা’

হেরোইন বিক্রির টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছ

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিয়ে নবজাতককে বিক্রি

পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণের ফাঁদ থেকে যেভাবে ফিরে এলেন ৪ তরুণ

অর্থপাচার মামলায় জি কে শামীমের ১০ বছর কারাদণ্ড

২৭ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে রক্ষা পেলেন জমির উদ্দিন

ধানমন্ডিতে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পলাতক আসামি জারিফ গ্রেপ্তার