উত্তরবঙ্গের অ্যামাজনে রূপ নিচ্ছে আশুড়ার বিল!

উত্তরবঙ্গের অ্যামাজন খ্যাত দিনাজপুরের বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আশুড়ার বিলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, এখানে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের অন্যমত ও আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসবেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০ হাজার নিম্ন আয়ের মানুষের। যাদের প্রতিদিন আয় হবে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব খাতায় প্রতিবছর জমা হবে প্রায় এক কোটি টাকা।
৮৫৭.৪৫ একর আয়তনের আশুড়ার বিলে প্রায় ২০-৩০ প্রজাতির গাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সমৃদ্ধ গহীন অরণ্য রয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশাল এই বিলের জলাশয়ে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় লাল খলশে, ধেধল ও কাকিলাসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। ভরা মৌসুমে বিলে বোয়াল, আইড়, গজার, শোল, পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, কৈ, মাগুর, পুঁটি ও বাইম মাছ পাওয়া যায়।
স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আশুড়ার বিল থেকে প্রতিবছর দেশীয় প্রজাতির প্রায় ২৭৫ টন মাছ পাওয়া যাবে, যা দিয়ে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার মাছের চাহিদা মেটানো যাবে। এছাড়া গত দুই দশক ধরে শীতকালে এ বিলে বালিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, হট্টিটি, রাঙ্গামুড়ি, সাদা মানিকজোড় ও শামুকখোলসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখি আসে।
আশুড়ার বিলকে তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শালবন। ৫১৭.৬১ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়েই এ শালবন। এখানে শালগাছ ছাড়াও রয়েছে সেগুন, গামার, কড়ই, বেত, বাঁশ ও জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির বিচিত্র গাছ। বনের ভেতরে প্রায়ই দেখা মেলে বনবিড়াল, খেকশিয়াল, বেজি, সাপ ও নানান প্রজাতির পাখি।
২০১০ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ শালবনের নামকরণ হয় শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। বিভিন্ন রঙের শাপলা আর পদ্মফুলে ভরা আশুড়ার বিলের উভয়পাশের শালবনকে সংযোগ করেছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কাঠের সেতু। ৯০০ মিটার লম্বা এ সেতুর নাম দেওয়া হয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু। আশুড়ার বিল ও কাঠের সেতু দেখতে এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী আসে।
উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বদলে যাবে উত্তরবঙ্গের অ্যামাজনখ্যাত আশুড়ার বিল। বদলে যাবে দিনাজপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলার কয়েক হাজার মানুষের জীবন ব্যবস্থা।