লঞ্চে যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলমুখী দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। কেবিন সংকট, বেশি দামে টিকিট ছাড়াও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেকের সিট বাণিজ্য। ডেকে তোশক ভাড়ার নামে যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ লঞ্চ স্টাফদের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ লঞ্চে সাধারণ যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ জায়গায় লঞ্চের স্টাফরা পেতে রাখছেন তোশক ও বিছানার চাদর। ফলে বাধ্য হয়ে স্টাফদের কাছ থেকে টিকিটের ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ডেকে জায়গা নিতে হচ্ছে যাত্রীদের। লঞ্চভেদে তোশক ও চাদর ভাড়া রাখা হচ্ছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
বরিশাল থেকে আসা কীর্তনখোলা লঞ্চের যাত্রী নিজাম ফরাজি বলেন, আমি বাসা থেকে চাদর নিয়ে এসেছিলাম। লঞ্চে উঠে দেখি জায়গা নেই, সব চাদর তোশক পাতা। পরে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে জায়গা নিতে হয়েছে।
অপর যাত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউসুফ ওসমান বলেন, এদের ধান্দাবাজির শেষ নেই। এতদিন কেবিন নিয়ে ব্যবসা করেছে, এবার ডেকেও। প্রশাসন কি করে বুঝি না।
এমভি রেড সান-৫-এর সুপারভাইজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লঞ্চে শুধু দুটি তোশক বা চাদর রাখার অনুমতি আছে। বাবুর্চি আর লস্কর সেগুলো ব্যবহার করেন। যাত্রীরাই তোশক, চাদর নিয়ে আসে। ঘাটের কিছু কর্মী ও কুলি যাত্রীবেশে এসে অসাধু উপায়ে চাদর সরবরাহ করে বাড়তি টাকা আদায় করে থাকে। আমরা অনেককে ধরেছি, তারপরও কমানো যায় না। এতে তো আমাদের লঞ্চের ইমেজ খারাপ হয়। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন-১১ লঞ্চের এক স্টাফ বলেন, সারা বছর তো এই ব্যবসা হয় না। ঈদের কয়েক দিন কিছু বাড়তি ইনকাম হয়। যাত্রীরাই তোশক-চাদর চায়। আমরা দামাদামি করি না, যে যা দেয় নিয়ে নিই।
এমভি কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের ব্যবস্থাপক স্বপন বলেন, আগে অনেক স্টাফ লঞ্চে তোশক ভাড়া দিতো। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এই কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা যাত্রীদের পরিচয় লিখে রেখে ভাড়া দিই।
কালোবাজারে অতিরিক্ত দামে কেবিনের টিকিট বিক্রিরও অভিযোগও যাত্রীদের। কালোবাজারে কেবিনের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কৃত্রিম কেবিন সংকট তৈরি করায় বাধ্য হয়েই বেশি টাকায় কেবিন নিতে হচ্ছে তাদের। কেবিন ছাড়াও সোফা সিট ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন সিট ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতি মহাসচিব শহীদুল ইসলাম ভূইঞা জানান, লঞ্চের ডেকে এভাবে তোশক-চাদর ভাড়া দেওয়া যাবে না। লঞ্চের কোনও স্টাফের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। টিকিট কালোবাজারি সমস্যা সমাধানের আমরা চেষ্টা করছি। লঞ্চের অনেক স্টাফ যাত্রী সাজিয়ে অতিরিক্ত টিকিট কিনতে পারে, লঞ্চ সংশ্লিষ্ট অনেকে নিজের নামে একাধিক টিকিট কিনে বিক্রি করতে পারেন। এগুলো ঠেকানো সম্ভব না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার নৌপথের যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা সড়ক ও রেলপথের থেকে অনেক বেশি। তারপরও অভিযোগ আসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার। বিআইডব্লিউটিএ যদি এগুলোর ঠিকমত নজরদারি করে, এমন কিছু হওয়ার কথা না। বিআইডব্লিউটিএ থেকে বারবার বলা হয় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরই তাদের নিজ উদ্যোগে নজরদারি বাড়ানো উচিত।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এসব সমস্যার সমাধানে লঞ্চ মালিকদের সচেতন হতে হবে।