ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান

নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুুদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে র্যাব এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানী থেকে শুরু করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায়ও চলছে এ অভিযান।
গত দুদিনে অন্তত চারটি বড় মজুদে হানা দিয়ে হাজার হাজার টন সয়াবিন তেল জব্দ করেছেন এসব আদালত। সোমবার যাত্রাবাড়ী, কাওরানবাজার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত এক ডজন ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও র্যাব জানিয়েছে- এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এদিকে অভিযানের মুখে অনেক অবৈধ মজুদধারী বাজারে তেল ছাড়তে শুরু করেছে। ক’দিন ধরে দেশের অধিকাংশ বাজারে তেলের সঙ্কট নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আসতে থাকে। বিশেষ করে খোলা সয়াবিনের তীব্র সঙ্কটের মুখে এ অভিযান শুরু করায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের টনক নড়ে।
এতে সোমবার থেকেই তেলের সরবরাহ ও জোগান স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ সরকার তেলের বাড়তি দাম কার্যকর করায এখন ব্যবসায়ীরা তেল ছাড়তে শুরু করেছেন। যে কারণে তেলের সঙ্কট কেটে যাবে। তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতিতে রাজধানীসহ দেশব্যাপী ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে ব্যাপক।
সোমবার ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বেসরকারী ভোক্তা অধিকার সংগঠন ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)। তাদের দাবি এ সঙ্কট কৃত্রিম। এজন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিতে হবে।
জানা গেছে, অবৈধ তেল মজুদদারীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার ও কঠোর করা হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলায় জেলায় সন্দেহজনক গোডাউনে হানা দেয়া হবে। এজন্য র্যাবসহ একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে নজরদারিতে রেখেছে কয়েকটি শীর্ষ মজুদধারীকে। তারই অংশ হিসেবে সোমবার যাত্রাবাড়ী ও চট্টগ্রামে বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়।
এদিন যাত্রাবাড়ীতে সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদ রাখার অপরাধে তিন দোকানিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস।
সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদের অপরাধে উত্তর যাত্রাবাড়ীর অদ্বিতি ট্রেডার্স, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বীণা রানী দাস জানান, এই তিনটি মুদি দোকানে সয়াবিন তেলের মূল্য বেশি রাখা ছাড়াও মজুদ বেশি রাখা হয়েছে। কোথা থেকে তারা এই তেল কিনেছে তার রশিদও দেখাতে পারেনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষে অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মোঃ আব্দুল জব্বার ম-ল এবং সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান।
এ সম্পর্কে সহকারী পরিচালক বীণা রানী দাস বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগ ছিল। এছাড়া তারা অতিরিক্ত তেল মজুদ রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছিলেন। তিনটি দোকান থেকে প্রায় ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেলের মজুদ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এ সময় জরিমানার পর প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিকেরা জানান, তাদেরও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল কিনতে হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রির সময়ে তাদের কখনও পাকা রসিদ দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল জব্বার ম-ল বলেন- পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সরবরাহ করার ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা যদি রশিদ না পান, সে ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। এদিকে ঢাকার বাইরেও চলছে সমানতালে অভিযান।
চট্টগ্রামে তিনদিনে সাড়ে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার দোকানে তেল না থাকলেও গুদামে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে হাজার হাজার লিটার তেল। সয়াবিন তেলের গোপন খনি উদঘাটিত হচ্ছে প্রতিদিন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সোমবার উদ্ধার হয়েছে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। এর আগে মহানগরী ও ফটিকছড়ি উপজেলায় গোপন গুদাম থেকে উদ্ধার হয় আরও সাড়ে ৩ হাজার লিটার ভোজ্যতেল।
‘ব্যবসায়ীদের বিশ^াসের খেরাসত দিতে হচ্ছে’, বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যই অনুমিত যে, ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদকরা যেমন কোনো দায় নিতে রাজি নন, তেমনিভাবে মিল মালিক ও পরিবেশকরা বলছেন ভিন্ন কথা।
দোকানিরা সরাসরিই বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রেখেছে পরিবেশক ও পাইকাররা। কিন্তু একের পর এক অভিযানে ভোক্তা অধিফতর অসাধু ব্যবসায়ীদের গোপন খনি থেকে যে হাজার হাজার লিটার তেল জব্দ করছে তা থেকে বোঝা যায় অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। চট্টগ্রামে একদিনের ব্যবধানে এবার ১৫ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। আগের দিন গোপন গুদাম থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১ হাজার ৫০ লিটার তেল।
সোমবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী বাজারে সিরাজ সওদাগরের দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদফতরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ।
রংপুরে ৮ হাজার লিটার মজুদ তেল জব্দ, পরে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সঙ্কট রোধ এবং সরবরাহ করতে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় তিনটি গোডাউনে মজুদ ৮ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। পরে তা বাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে সংস্থাটি। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গোডাউন মালিককে সতর্কসহ জরিমানাও করা হয়েছে।