আমার স্ত্রী যা করেছেন তাতে আমি বিব্রত: রেলমন্ত্রী

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:২৪, রবিবার, ৮ মে, ২০২২, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়’ দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীদের জরিমানার ঘটনা এখন আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে। এ ঘটনায় মন্ত্রী বলেছিলেন ওই যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। তবে সুর পাল্টে অনেকটা দুঃখ প্রকাশ করে রেলমন্ত্রী জানালেন, তাকে কিছু না জানিয়েই ওই ফোনটি তার স্ত্রী করেন। বিষয়টি ঠিক করেননি তিনি।

রোববার (৮ মে) দুপুরে রেলভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

মন্ত্রী বলেন, আত্মীয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আমার স্ত্রী। কিন্তু বরখাস্ত করার কথা তিনি বলেননি। আমার স্ত্রী আমাকে না জানিয়ে যেটি করেছে সেটি ঠিক করেননি। এতে আমি বিব্রত। আমার স্ত্রী যদি কোনো ধরনের ভুল করে থাকেন… আমার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। যেটি বলা হচ্ছে বা টার্গেট করা হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে মেসেজটা যেভাবে গেছে এটা সঠিক হয়নি।

রেলমন্ত্রী আরও বলেন, কেন এত দ্রুত টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে এ জন্য পাকশীর ডিসিওকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিটিইকে পুরস্কৃত করাও হতে পারে।

রেলমন্ত্রী বলেন, একজন টিটিইর দায়িত্বই হচ্ছে এটা দেখা যে, কোনো যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে কিনা। যাত্রীদের সহযোগিতা করা। ডিসিপ্লিন আনার ক্ষেত্রে একজন টিটিইর এটিই দায়িত্ব। আমি এ কথাটিই বলেছি।

বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া তিনজনের সঙ্গে সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, তিনি ঢাকাতেই থাকেন। তার মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তারা (কায়েস-হাসান) আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না, এরা কারা এবং আমার জানার কথাও না।

টিআইবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, টিআইবি দ্রুত সময়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এখানে মন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা দেখার আগেই তারা এটা করেছে।

এদিকে ঘটনায় রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রোববার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর রেল ভবনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় পাকশীর ডিসিও (বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিনকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হবে।

এর আগে শনিবার (৭ মে) রেলমন্ত্রী বলেন, বিনা টিকিটের ওই যাত্রীদের সঙ্গে টিকিট কর্মকর্তা বাজে ব্যবহার করেছেন, যে কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় তো সবাই আমার আত্মীয়। তাই বলে আমার নাম ভাঙিয়ে ট্রেনের টিকিট না কেটে ভ্রমণ করবে এটা তো হয় না।

রেলমন্ত্রী বলেন, ওই যাত্রীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই টিকিট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদি এই লিখিত অভিযোগ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে প্রশংসিত করা হবে।

এ ছাড়া এ ঘটনায় টিটিই শফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোরও নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসে মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে (৫ মে) পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন ‘রেলপথমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয়দানকারী ৩ যাত্রী। টিকিট না কাটলেও তারা রেলের এসি কেবিনের সিট দখল করেন। এতে রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) তাদের জরিমানা করেন। পরে ওই ৩ যাত্রী তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় বলে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে টিটিই শফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাময়িক বরখাস্ত করে রেল কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বরখাস্তাদেশ শুক্রবার (৬ মে) থেকে কার্যকর হয়। বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাকশীর ডিসিও (বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা) নাসির উদ্দিন।

Share This Article