একই পরিবারে ৪ ভাই-বোন প্রতিবন্ধী, কষ্টে কাটছে দিন

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:২৪, শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর নিয়ামতপুরের শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের চার প্রতিবন্ধী সন্তানের দিন কাটছে অনেক কষ্টে। তাদের মধ্যে ৩ জন ছেলে ও ১ মেয়ে। তারা কেউই হাঁটতে বা চলাফেরা করতে পারেন না।

এদিকে সবার ছোট ভাই আব্দুর রহমান বাড়ির পাশে ছোট একটি দোকান দিয়েছেন। সেখান থেকে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের সীমাহীন কষ্টের সংসার। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত এই পরিবার। গরীব অসহায় পিতা তার প্রতিবন্ধী ৪ সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের এবং সন্তানদের চিকিৎসা করাতে সর্বস্ব হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন।

ছোট ভাই আব্দুর রহমান জানান, আজ থেকে ৩২ বছর আগে বাবা বিয়ে করেন কহিনুর বেগমকে। বিয়ের পর প্রথম সন্তান হয় আমেনা খাতুন। তিনি ভালো ও সুস্থ থাকায় বাবা তাকে একই উপজেলার বালুবাজার গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর জন্ম নেয় আব্দুল হাকিম। তিনি জন্মগ্রহণ করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসাবে। এরপর সালমা বেগম, আলমগীর হোসেন ও আব্দুর রহমান।


বড় বোন আমেনা বেগম ছাড়া একে একে ৪ ভাই-বোন সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা কহিনুর বেগম আমাদেরকে লালন-পালন করতে করতে তিনি নিজেই পাগল হওয়ায় আমাদের দেখাশোনা করার জন্য বাবা ২য় বিয়ে করেন কমলা বানুকে। তিনি আমাদের দেখাশোনা করছেন। সৎ মা হলে কি হবে তিনি ২৪ ঘণ্টা আমাদের যত্ন নেন।

কষ্টের কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বলেন, যদি আল্লাহ তায়ালা আত্মহত্যাকে পাপ না ঘোষণা করতেন তাহলে আমরা আত্মহত্যা করতাম। বয়সের ভারে দিন দিন অসুখ-বিসুখ লেগেই রয়েছে। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হয়। টাকা পয়সার অভাবের অন্ত নেই।

সবার ছোট ভাই বাড়ির পাশে ছোট একটি দোকান দিয়েছেন, তাতে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। বাবার অনেক বয়স হলেও অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। বাবা-মা মারা গেলে তারা কিভাবে চলফেরা করবেন, কে তাদেরকে খাওয়াবে পড়াবে আর বাজার করে দিবে, কে তাদের রান্না করে দিবে সেই চিন্তা তাদের সবসময় খুঁজেফিরে।

মা কমলা বানু বলেন, প্রথম স্ত্রীর মাথার সমস্যা থাকায় আমাকে ২য় বিয়ে করেন। প্রথমে এসে দেখি এক পরিবারে ৪ জন প্রতিবন্ধী। তাদেরকে মেনে নিয়ে এই সংসারে আছি। আমি তাদেরকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। তারা তো এতিম অসহায় ও নিস্পাপ। তাই তাদেরকে ছেড়ে যেতে পারিনি। যেন আল্লাহ তায়ালা তাদের অছিলায় আমাকে বেহেশত নসিব করেন।

প্রতিবেশীরা বলেন, তারা সকলেই ছোট বেলা থেকে দেখছেন মকবুলের ৫ সন্তানের মধ্যে ৪ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের দিন-রাত কাটে কষ্টে। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের নিকট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাদের সকলকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়; পর্যায়ক্রমে তাদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

 

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article