প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঞ্চয়পত্র কেনা নিয়ে স্মৃতিচারণ
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৫৯ সালে একটি সঞ্চয়পত্র কেনা নিয়ে তার ফেসবুক পেজে স্মৃতিচারণ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান আমলের এই সঞ্চয়পত্রটি কিনেছিলাম আমি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা স্কুলে ক্লাস সেভেন-এ পড়তাম; কেনার তারিখ ১৯৫৯ সাল দেখে বলতে পারছি। অনেক পুরনো কিছু কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো, ফেলেই দিচ্ছিলাম প্রায়।
এটির এখন আর কোনো আর্থিক মূল্য নেই। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত স্মৃতিটা মূল্যবান। মনে পড়লো যে- তখন আমি নামের শেষে পারিবারিক পদবী ‘চৌধুরী’ লিখতাম। (ক্লাস এইট-এ উঠে যখন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি তখন নামের শেষের ওই অংশ ছেঁটে ফেলি।) এটাও অস্পষ্ট মনে পড়ছে যে আমার আব্বা ৫শ টাকা আমার হাতে দিয়ে পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্রটি কিনতে বলেছিলেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘তখনকার সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই টাকার অঙ্কটা মোটেই নগণ্য ছিল না। বিশেষত আমার আব্বা অসম্ভব সৎ ও কৃচ্ছতার জীবনযাপনের মধ্যে যেটুকু সঞ্চয় করতে পারতেন, সে তুলনায় এই অঙ্কের সঞ্চয়পত্র একটা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ বলতে হবে। ওই বয়সে সেটা মাথায় আসেনি। হতে পারে আমি একা গিয়ে কাজটা করার মত স্মার্ট কিনা তা তিনি দেখতে চেয়েছিলেন; অবশ্য আমি পারব সে বিশ্বাস তাঁর নিশ্চয়ই ছিল। তবে এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ছিল না।
তিনি হয়তো হিসাব করে দেখেছিলেন ১০ বছর পর সঞ্চয়পত্রটির মেয়াদ যখন পূর্ণ হবে, তখন কে কোথায় থাকবে, হয়তো তখন আমার কোনো প্রয়োজনে টাকাটা কাজে লাগবে, এবং আমার জন্য এটা তার দোয়ার চিহ্ন হিসাবে থাকবে। ১৯৮৫ সনে ৭২ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু সঞ্চয়পত্রটির কথা তিনিও কখনো উল্লেখ করেননি, আমারও কখনো মনে ছিল না।’
বিভিন্ন মন্তব্যের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৫৯ সনের ৫শ টাকার এখনকার মূল্যমান কেমন এ নিয়ে দেখছি অনেকে চিন্তা করছেন। এটা একটি ভালো প্রশ্ন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি হিসাবে নিলে তখনকার এক ডলার এখনকার অন্তত দশ ডলারের সমান। আর তখনকার পাকিস্তানের এক ডলারের দাম ছিল পৌনে ৫ টাকার মতো। কাজেই সে সময়ের ৫শ টাকা যে ১০৫ ডলারের সমান ছিল তা এখনকার ১ হাজার ৫০ ডলারের সমমূল্যের (বর্তমানের বাংলাদেশের ১ লাখ টাকার মতো)।’